ইউরোপের সুপারকম্পিউটিং-এ নতুন দিগন্ত: জুপিটার সুপারকম্পিউটার চালু

সম্পাদনা করেছেন: Tetiana Pin

ইউরোপের প্রযুক্তি জগতে এক নতুন মাইলফলক স্থাপিত হলো জুপিটার সুপারকম্পিউটার চালু হওয়ার মাধ্যমে। জার্মানির জুলিশ সুপারকম্পিউটিং সেন্টারে (Jülich Supercomputing Centre) গত ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে এই অত্যাধুনিক যন্ত্রটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এটি কেবল ইউরোপের দ্রুততম সুপারকম্পিউটারই নয়, বিশ্বজুড়ে চতুর্থ দ্রুততম হিসেবেও স্থান করে নিয়েছে।

জুপিটার, যা প্রায় ২৪,০০০ এনভিডিয়া জিএইচ২০০ (Nvidia GH200) সুপারচিপ দিয়ে সজ্জিত, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ক্ষেত্রে ৯০ এক্সাফ্লপস (exaflops) পর্যন্ত এবং প্রচলিত গণনার জন্য প্রায় ৯৩০ পেটাফ্লপস (petaflops) পর্যন্ত ক্ষমতা রাখে। এর ফলে এটি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের মতো জটিল বিষয়গুলির সিমুলেশনে অভূতপূর্ব গতি ও নির্ভুলতা আনতে সক্ষম। জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস (Friedrich Merz) এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জুপিটারকে "ইউরোপের দ্রুততম কম্পিউটার এবং মহাদেশের জন্য একটি অগ্রণী প্রকল্প" হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জলবায়ুবিদ্যা, জ্যোতির্পদার্থবিদ্যা এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটিং-এর মতো ক্ষেত্রগুলিতে এর সম্ভাবনার উপর জোর দেন। এই সুপারকম্পিউটারটি প্রায় ১ মিলিয়ন স্মার্টফোনের সম্মিলিত শক্তির সমান এবং এটি ইউরোপের প্রথম সুপারকম্পিউটার যা এআই মডেল প্রশিক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতামূলক বলে বিবেচিত হচ্ছে।

জুপিটারের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এর শক্তি-সাশ্রয়ী নকশা। এটি একটি পুনঃব্যবহারযোগ্য তরল শীতলীকরণ ব্যবস্থা (liquid cooling system) ব্যবহার করে, যা প্রায় ১১,০০০ বাড়ির বিদ্যুতের সমতুল্য শক্তি ব্যবহার করে। এছাড়াও, এর বর্জ্য তাপ (waste heat) সুপারকম্পিউটিং সেন্টারের ক্যাম্পাসের ভবনগুলিকে উষ্ণ রাখতে ব্যবহৃত হয়, যা পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। জুপিটারের মডুলার নকশা এটিকে সাতটি কক্ষে বিস্তৃত করেছে, যেখানে ১২৫টি সুপারচিপ র‍্যাক রয়েছে। এটি ফ্রন্টিয়ার (Frontier) এবং এল ক্যাপিটান (El Capitan)-এর মতো শীর্ষস্থানীয় মার্কিন সুপারকম্পিউটারগুলির সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য পর্যায়ক্রমে পরিবর্ধনযোগ্য।

প্রতিটি চিপে ৬২৪ জিবি (GB) এইচবিএম৩ই (HBM3e) মেমরি এবং প্রায় এক এক্সাবাইট (exabyte) স্টোরেজ ক্ষমতা রয়েছে, যা এটিকে বৃহৎ আকারের এবং জটিল প্রকল্পগুলি সম্পাদনের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী করে তুলেছে। ইভিডেন (Eviden)-এর বুলসিকোয়ানা এক্সএইচ৩০০০ (BullSequana XH3000) আর্কিটেকচার, যা জুপিটারকে শক্তি যোগায়, সিপিইউ (CPU) এবং জিপিইউ (GPU)-কে ডেটা কপি না করেই মেমরি শেয়ার করার সুবিধা দেয়, যা গণনার গতি ও কার্যকারিতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে। প্রতিটি চিপ ৬২৪ জিবি (GB) পর্যন্ত মেমরি পরিচালনা করতে পারে এবং এনভিএল২ (NVL2) মডিউল দুটি সুপারচিপকে একত্রিত করে জেনারেটিভ এআই (generative AI) এবং ভাষা মডেলগুলির উপর যৌথভাবে কাজ করার সুযোগ করে দেয়। জুপিটার ইতিমধ্যেই অ্যান্টেয়া (Antea)-এর মতো প্রকল্পগুলিতে কাজ শুরু করেছে।

এর উন্মোচন ইউরোপীয় সুপারকম্পিউটিং-এর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, যা প্রযুক্তিগত গবেষণা ও উন্নয়নে ইউরোপের অবস্থানকে বিশ্ব মঞ্চে আরও সুদৃঢ় করেছে। ইউরোপীয় উচ্চ-পারফরম্যান্স কম্পিউটিং জয়েন্ট আন্ডারটেকিং (EuroHPC JU) দ্বারা সমন্বিত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জার্মানি দ্বারা অর্থায়িত এই প্রকল্পটি কেবল একটি প্রযুক্তিগত অগ্রগতিই নয়, বরং ইউরোপের জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতি এবং ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব অর্জনের পথে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।

উৎসসমূহ

  • Computer Hoy

  • Forschungszentrum Jülich - Jülich Supercomputing Centre

  • TOP500 List - June 2025

  • Green500 List - June 2025

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।