প্রোগ্রামিংয়ের জগতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) এক অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। গুগল ডিপমাইন্ডের অত্যাধুনিক এআই মডেল, জেমিনি ২.৫ ডিপ থিঙ্ক, ২০২৫ সালের ইন্টারন্যাশনাল কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং কনটেস্ট (আইসিপি সি) ওয়ার্ল্ড ফাইনালসে স্বর্ণপদক জয় করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিত এই মর্যাদাপূর্ণ প্রতিযোগিতায় জেমিনি ২.৫ ডিপ থিঙ্ক কেবল অংশগ্রহণই করেনি, বরং এমন একটি সমস্যা সমাধান করেছে যা বিশ্বের কোনো মানব দলই সমাধান করতে পারেনি।
এই এআই মডেলটি প্রতিযোগিতার পাঁচ ঘন্টার মধ্যে ১২টি জটিল অ্যালগরিদমিক সমস্যার মধ্যে ১০টি সফলভাবে সমাধান করে। এর মধ্যে 'প্রবলেম সি' নামক একটি বিশেষ সমস্যা ছিল, যা সকল মানব দলের জন্য একটি অদম্য চ্যালেঞ্জ প্রমাণিত হয়েছিল। জেমিনি ২.৫ ডিপ থিঙ্কের এই কৃতিত্ব তার উন্নত বিমূর্ত সমস্যা-সমাধান এবং সৃজনশীল ক্ষমতাকে তুলে ধরে। এই মডেলটি কেবল প্রোগ্রামিং জগতেই নয়, এর আগে জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল ম্যাথমেটিক্যাল অলিম্পিয়াড (আইএমও)-তেও স্বর্ণপদক অর্জন করেছিল, যেখানে এটি বীজগণিত, কম্বিনেটরিক্স, জ্যামিতি এবং সংখ্যা তত্ত্বের মতো বিভিন্ন জটিল বিষয়ে দক্ষতা প্রদর্শন করে।
আইসিপি সি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩,০০০ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১০০টিরও বেশি দেশের অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে আয়োজিত সবচেয়ে প্রাচীন এবং মর্যাদাপূর্ণ কলেজ-স্তরের অ্যালগরিদমিক প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা হিসেবে স্বীকৃত। এর কঠোর মানদণ্ড সমস্যা-সমাধানের শ্রেষ্ঠত্বের একটি বৈশ্বিক মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়। আইসিপি সি-এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ডঃ বিল পাউচার এই অর্জন সম্পর্কে বলেন, "আইসিপি সি সবসময়ই সমস্যা-সমাধানের সর্বোচ্চ মান নির্ধারণের জন্য পরিচিত। জেমিনি এই অঙ্গনে সফলভাবে প্রবেশ করেছে এবং স্বর্ণপদক-স্তরের ফলাফল অর্জন করেছে, যা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য প্রয়োজনীয় এআই সরঞ্জাম এবং একাডেমিক মান নির্ধারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।"
এই সাফল্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিবর্তনে একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। জেমিনি ২.৫ ডিপ থিঙ্কের মতো মডেলগুলি জটিল সমস্যা-সমাধানে মানুষের কর্মক্ষমতাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ক্ষমতা প্রদর্শন করছে। এই ধরনের উন্নত এআই সিস্টেমগুলির বিভিন্ন শিল্পে একীকরণ সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার মতো ক্ষেত্রগুলিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি চালিত করতে পারে। এই মডেলটি কেবল একটি সরঞ্জাম নয়, বরং এটি মানব-এআই সহযোগিতার এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে, যেখানে এআই জটিল সমস্যা সমাধানে মানব বিশেষজ্ঞদের পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে পারে। এটি দেখায় যে এআই কেবল তথ্য প্রক্রিয়াকরণ থেকে সরে এসে বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন যুক্তির সমস্যা সমাধানে সহায়তা করছে, যা মানবতার উপকারে আসতে পারে।