মাত্র সতেরো বছর বয়সে, মেক্সিকোর তরুণী বক্সার কামিলা সামোরানো বক্সিং জগতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। তিনি ফ্লাইওয়েট বিভাগে (৪৬.২৬ কেজি) ডব্লিউবিসি (WBC) বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ঘোষিত হয়েছেন, যা তাঁকে ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ মহিলা বক্সিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। এই অর্জন কেবল একটি ক্রীড়া সাফল্য নয়, বরং এটি দৃঢ় সংকল্প এবং সঠিক পথে চালিত শক্তির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, যা সময়ের বাঁধাধরা নিয়মকে অতিক্রম করতে সক্ষম।
সামোরানো, যিনি 'ম্যাগনিফিকা' নামেও পরিচিত, তাঁর পেশাদার যাত্রা শুরু করেছিলেন মাত্র এক বছর আগে, লাইসেন্স পাওয়ার ন্যূনতম বয়স অর্জনের পরেই। তাঁর জন্ম ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে। বাবার তত্ত্বাবধানে মাত্র ১১ বছর বয়সে বক্সিং শুরু করে তিনি অপেশাদার পর্যায়ে ৫৩টি জয় এবং চারটি পরাজয়ের রেকর্ড গড়ে তোলেন। তাঁর দ্রুত উত্থান প্রমাণ করে যে নিজের ভেতরের সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দিয়ে পদক্ষেপ নিলে পরিস্থিতি দ্রুত অনুকূল হয়ে ওঠে। এই নতুন বিশ্বসেরা হওয়ার পূর্বে, কামিলা সামোরানো তাঁর পেশাদার ক্যারিয়ারে ১২টি লড়াইয়ে ১২টি জয় অর্জন করেছিলেন, যার মধ্যে একটি নকআউট ছিল।
তাঁর অবিশ্বাস্য পথচলার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ছিল জুন মাসে মিকা ইওয়াকাওয়ার বিরুদ্ধে লড়াই, যেখানে তিনি সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে জয়লাভ করে ডব্লিউবিসি অন্তর্বর্তীকালীন চ্যাম্পিয়ন হন। এই অন্তর্বর্তীকালীন অবস্থান থেকে তিনি এখন 'পরম' চ্যাম্পিয়ন হিসেবে উন্নীত হয়েছেন। এই শিরোপা জয়ের মাধ্যমে কামিলা প্রাক্তন রেকর্ডধারী জার্মান বক্সার টিনা রুপরেখটকে অতিক্রম করেছেন, যিনি ৩৩ বছর বয়সে তাঁর শিরোপা জিতেছিলেন। রুপরেখট সম্প্রতি অবসর গ্রহণের ঘোষণা দেওয়ায়, ডব্লিউবিসি ১৫ অক্টোবর তারিখে সামোরানোকে পূর্ণ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ঘোষণা করে।
যদিও কামিলা এখন সর্বকনিষ্ঠ মহিলা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, তবে সামগ্রিকভাবে বক্সিং ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ডটি এখনও উইলিফ্রেডো বেনিতেজের দখলে, যিনি ১৯৭৬ সালে ১৭ বছর ৫ মাস বয়সে ডব্লিউবিএ (WBA) শিরোপা জিতেছিলেন। মহিলা বক্সিংয়ে পূর্বে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার চই হিউন-মির দখলে, যিনি ২০০৮ সালে ১৭ বছর ৩৩৯ দিন বয়সে ডব্লিউবিএ ফেদারওয়েট শিরোপা জিতেছিলেন। কামিলা সেই রেকর্ড ভেঙেছেন ৪৬ দিনের ব্যবধানে।
এই তরুণী চ্যাম্পিয়ন শুধু রিংয়েই ইতিহাস গড়েননি, তিনি তাঁর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার এবং সোনোরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন। এই ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষমতা ইঙ্গিত দেয় যে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা এবং প্রতিটি ক্ষেত্রকে গুরুত্ব দেওয়া কীভাবে সামগ্রিক সাফল্যের পথ প্রশস্ত করে। কামিলা সামোরানোর এই যাত্রা কেবল শক্তি প্রদর্শনের গল্প নয়, বরং এটি দেখায় যে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ এবং অভ্যন্তরীণ স্থিরতা কীভাবে অভূতপূর্ব সাফল্য এনে দিতে পারে।
