পল ম্যাককার্টনির উত্তর আমেরিকান সফরের সমাপ্তি: হ্যামিল্টনে ব্যাগপাইপারদের সাথে এক ঐতিহাসিক সন্ধ্যা

২৫শে নভেম্বর, ২০২৫ তারিখে হ্যামিল্টন শহরটি যেন এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হলো, যেখানে পল ম্যাককার্টনির অতীত ও বর্তমান এক সুতোয় বাঁধা পড়ল। তাঁর বহুল প্রতীক্ষিত উত্তর আমেরিকান সফরের সমাপ্তি পর্বের এই শেষ কনসার্টটি নিছক একটি সঙ্গীতানুষ্ঠান ছিল না; এটি সঙ্গীতের জীবন্ত ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় রচনা করল।

TD কলাইজিয়াম, যা সম্প্রতি ৩০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে সংস্কারের পর এক অত্যাধুনিক শব্দ-তীর্থরূপে আত্মপ্রকাশ করেছে, সেখানে হাজার হাজার দর্শক ভিড় জমিয়েছিলেন। তবে সন্ধ্যার প্রধান আকর্ষণ কেবল মঞ্চের জাঁকজমক ছিল না, বরং মঞ্চে যা ঘটল, তা ছিল অপ্রত্যাশিত এবং অবিস্মরণীয়।

কাইন্টির মুল ফিরে আসা – ৮ বছরের নীরবতার পর

যখন প্যারিস পোর্ট ডোভার পাইপ ব্যান্ডের ২৮ জন ব্যাগপাইপার এবং ড্রামার মঞ্চে প্রবেশ করলেন, তখন গোটা প্রেক্ষাগৃহ যেন মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল। এরপরেই বেজে উঠল সেই বহু প্রতীক্ষিত গান – ‘Mull of Kintyre’। ম্যাককার্টনি এই গানটি ২০১৭ সালের পর আর কখনও পরিবেশন করেননি।

এটি কেবল নস্টালজিয়ার প্রত্যাবর্তন ছিল না; এটি ছিল গভীর সংযোগ, ঐতিহ্য এবং শিকড়ের প্রতি এক শ্রদ্ধার্ঘ্য, যা সঙ্গীতকে চিরন্তন করে তোলে। এই বিশেষ পরিবেশনার জন্য ব্যাগপাইপ ও ড্রামের উপযোগী ব্যবস্থাটি তৈরি করেছিলেন ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা গর্ডন ব্ল্যাক। ম্যাককার্টনির দীর্ঘদিনের কীবোর্ড বাদক পল উইকেন্ডসের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের ফলেই এই বিরল এবং প্রায় জাদুকরী সহযোগিতা সম্ভব হয়েছিল।

প্যারিস পোর্ট ডোভার পাইপ ব্যান্ড তাদের দীর্ঘ কর্মজীবনে ম্যাককার্টনির সাথে মাত্র চারবার মঞ্চ ভাগ করে নিয়েছে। ফলস্বরূপ, হ্যামিল্টনের দর্শকদের জন্য এই মুহূর্তটি ছিল এক অনন্য উপহার, যা সহজে ভোলার নয়।

সময়কে অতিক্রম করা সেট-লিস্ট

প্রায় তিন ঘণ্টার এই মনোমুগ্ধকর পরিবেশনায় ম্যাককার্টনির সঙ্গীতের বিশাল জগৎ উন্মোচিত হয়। তাঁর বিস্তৃত কর্মজীবনের সেরা সৃষ্টিগুলি শ্রোতাদের সামনে তুলে ধরা হয়।

• দ্য বিটলসের কালজয়ী গান, যেমন ‘Love Me Do’ এবং ‘Hey Jude’

এই বৈচিত্র্য প্রমাণ করে যে পল ম্যাককার্টনির সঙ্গীত কেবল অতীতের স্মৃতিচারণ নয়; এটি এমন এক সৃষ্টি যা সময়ের সাথে সাথে নিজেকে নবায়ন করতে পারে এবং চিরকাল প্রাসঙ্গিক থাকতে পারে।

এই কনসার্টটি যেন এক সুসংহত প্রতীকের মিলনস্থল হয়ে উঠেছিল:

❖ ৮ বছর অপেক্ষার পর একটি গানের প্রত্যাবর্তন
❖ সদ্য সংস্কার হওয়া ভেন্যুর উদ্বোধন
❖ ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সফল সংমিশ্রণ
❖ মঞ্চে এবং দর্শকদের ভিড়ে প্রজন্মের মেলবন্ধন

হ্যামিল্টনে ‘Mull of Kintyre’-এর পরিবেশনা কেবল একটি গান হিসেবে শোনায়নি; এটি যেন শিকড়ের কাছে ফিরে আসার এক আহ্বান ছিল। এটি স্মরণ করিয়ে দিল যে সঙ্গীত আমাদের মাঝে বেঁচে থাকে – স্মৃতিতে, কণ্ঠে এবং দর্শকদের সম্মিলিত নিঃশ্বাসে।

কখনও কখনও একটি সন্ধ্যা নিজেই একটি ছোটখাটো কিংবদন্তি হয়ে ওঠে। নিঃসন্দেহে, এই রাতটি ছিল তেমনই এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যা সঙ্গীতপ্রেমীদের হৃদয়ে চিরকাল অমলিন থাকবে।