খাদ্য সংরক্ষণের একটি প্রাচীন পদ্ধতি, জলবিয়োজন বা ডিহাইড্রেশন, ফল ও সবজির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আজও একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হিসেবে বিবেচিত হয়। জল অপসারণের মাধ্যমে, এটি ছাঁচ এবং ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ ধরে রাখে। বিভিন্ন পদ্ধতিতে জলবিয়োজন করা যেতে পারে, যেমন বেশি পরিমাণে সংরক্ষণের জন্য ইলেকট্রিক ডিহাইড্রেটর, সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় সেট করা ওভেন (দরজা সামান্য খোলা রেখে), এবং প্রাকৃতিক উপায়ে রোদে শুকানো।
প্রস্তুত প্রণালীর মধ্যে রয়েছে ধোয়া, খোসা ছাড়ানো এবং সমানভাবে কাটা। আপেলের মতো ফলের বাদামী হওয়া রোধ করতে সাইট্রিক অ্যাসিডে ডুবিয়ে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। জলবিয়োজন করা খাদ্যের অনেক সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী মেয়াদ, আউটডোর কার্যকলাপের জন্য আদর্শ হালকা ও বহনযোগ্য ওজন, এবং পুষ্টিগুণ বজায় রাখা উল্লেখযোগ্য। বায়ুরোধী পাত্রে ঠান্ডা, অন্ধকার জায়গায় সংরক্ষণ করলে এর গুণমান বজায় থাকে এবং খাওয়ার আগে জলে ভিজিয়ে রাখলে এর পূর্বের গঠন ফিরে আসে।
এই পদ্ধতিটি প্রায় ১২,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে প্রচলিত, যা এটিকে সভ্যতার মতোই প্রাচীন করে তুলেছে। প্রাচীন মিশরীয়রা মরুভূমির তাপে মাছ ও শস্য শুকাতো, এবং আঙ্গুর শুকিয়ে কিশমিশ তৈরি করত। দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ অঞ্চলের ইনকা সভ্যতার মানুষেরা আলু জমিয়ে ও পরে রোদে শুকিয়ে 'চুño' তৈরি করত, যা বছরের পর বছর সংরক্ষণ করা যেত। এই প্রাচীন কৌশলগুলি কেবল খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতেই সাহায্য করেনি, বরং দীর্ঘ যাত্রার সময়ও খাদ্য বহন করার সুবিধা দিয়েছে।
আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে, ভ্যাকুয়াম-মাইক্রোওয়েভ ডিহাইড্রেশনের মতো উন্নত পদ্ধতিগুলি দ্রুত এবং কার্যকরভাবে জল অপসারণ করতে সক্ষম, যা পুষ্টিগুণ, রঙ এবং স্বাদ বজায় রাখতে সাহায্য করে। এই পদ্ধতিগুলি ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতির তুলনায় কম তাপ এবং অক্সিজেনের সংস্পর্শে খাদ্য শুকায়, যা ভিটামিন এবং খনিজগুলির ক্ষতি কমিয়ে দেয়। এটি খাদ্য সংরক্ষণের একটি কার্যকর উপায় যা খাদ্য অপচয় কমায় এবং সারা বছর ধরে তাজা ফলের মতো পুষ্টিকর খাবার সহজলভ্য করে তোলে।