হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত জরুরি। অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা এবং খাদ্যাভ্যাসের কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই, হৃদযন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখতে কিছু নির্দিষ্ট খাবার এড়িয়ে চলা এবং কিছু স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন।
অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট, অতিরিক্ত চিনি এবং লবণের ব্যবহার কমানো উচিত। প্রক্রিয়াজাত খাবার, ভাজাভুজি এবং চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চললে তা হৃদযন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই ধরনের খাবার রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে পারে এবং রক্তনালীতে খারাপ কোলেস্টেরল জমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। রেড মিট, কলিজা, মগজ এবং হাড়ের মজ্জার মতো উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত খাবারগুলিও হৃদরোগীদের এড়িয়ে চলা উচিত। এছাড়া, অতিরিক্ত মিষ্টি পানীয় যেমন সোডা বা কোল্ড ড্রিঙ্কস হৃদরোগের পাশাপাশি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ায়। স্ন্যাকস, বিস্কুট, কেক এবং ময়দা দিয়ে তৈরি খাবারগুলিতে অতিরিক্ত চিনি ও ফাইবার কম থাকে, যা ওজন বৃদ্ধি এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বাড়াতে পারে। সাদা ভাত, রুটি এবং পাস্তাও রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
অন্যদিকে, ফল, শাকসবজি, তৈলাক্ত মাছ (যেমন স্যামন, টুনা, ইলিশ) এবং বাদাম জাতীয় খাবার হৃদযন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই খাবারগুলিতে ফাইবার, ভিটামিন, খনিজ এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড এবং এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে, এইচডিএল কোলেস্টেরল বাড়াতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ইলিশ মাছ, যা বাংলার একটি জনপ্রিয় খাবার, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি চমৎকার উৎস এবং এটি কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়ক।
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন গোটা শস্য (ওটস, বার্লি, বাজরা), মটরশুটি, ফল এবং সবজি হজম স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক। দ্রবণীয় ফাইবার খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণও হৃদযন্ত্রের সুস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। মানসিক চাপ কমাতে ধ্যান, যোগাভ্যাস এবং শখের চর্চা করা যেতে পারে। একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা, যেখানে সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম এবং মানসিক শান্তির সমন্বয় থাকে, তা হৃদরোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো বুকে ব্যথা বা অস্বস্তির লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।