গাজর, যা মূলত ফিলিস্তিনে উদ্ভূত হয়েছিল বলে মনে করা হয়, অভিবাসনের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এই বহুমুখী মূল সবজিটি, যা কমলা থেকে কালো পর্যন্ত বিভিন্ন রঙে পাওয়া যায়, তার স্বাদ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য রান্নাঘরে একটি অপরিহার্য উপাদান হয়ে উঠেছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে গাজর খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দী থেকেই ফিলিস্তিনে চাষ করা হতো, যেখানে বিভিন্ন রঙের এবং আকারের গাজরের জাত বিদ্যমান ছিল। দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে, মধ্যপ্রাচ্যে এর ব্যাপক চাষ এবং ব্যবহার তুলে ধরে কৃষি বিষয়ক লেখায় গাজরের উল্লেখ পাওয়া যায়।
গাজরের বিশ্বব্যাপী বিস্তারের ফলে নতুন নতুন জাতের উদ্ভব হয়েছে, যার মধ্যে কালো গাজর বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যা তুরস্কের আদানা অঞ্চলের মতো জায়গায় চাষ করা হয়। এই জাতগুলি ঐতিহ্যবাহী এবং আধুনিক উভয় রন্ধনপ্রণালীতে ব্যবহৃত হয়। গাজরের এই বিস্তৃত ইতিহাস কেবল একটি উদ্ভিদের যাত্রাই নয়, বরং এটি বহন করে সাংস্কৃতিক এবং রন্ধনসম্পর্কীয় ঐতিহ্যকেও। বর্তমানে, গাজর বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ধরণের রেসিপিতে ব্যবহৃত হয়ে রন্ধনপ্রণালীতে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।
গবেষণায় জানা যায় যে, গাজরের আদি উৎস ছিল আফগানিস্তান এবং উত্তর ইরান বা পাকিস্তানের মতো অঞ্চলে। প্রায় ১,১০০ বছর আগে মধ্য এশিয়ায় এর চাষ শুরু হয়েছিল, যেখানে মূলত বেগুনি এবং হলুদ রঙের গাজর পাওয়া যেত। এই আদি গাজরগুলি পরবর্তীতে মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। দ্বাদশ শতাব্দী নাগাদ, এটি স্পেন এবং দক্ষিণ ইউরোপে প্রবেশ করে এবং পরবর্তীতে উত্তর ইউরোপে এর চাষ শুরু হয়। বর্তমানে আমরা যে কমলা রঙের গাজর দেখতে পাই, তার উদ্ভব ঘটেছিল প্রায় সপ্তদশ শতাব্দীতে নেদারল্যান্ডল্যান্ডে। ডাচ চাষীরা বিভিন্ন জাতের সংমিশ্রণে উন্নত মানের, মিষ্টি এবং পুষ্টিকর কমলা গাজর তৈরি করেন, যা দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
তবে, বেগুনি, হলুদ, সাদা এবং কালো সহ বিভিন্ন রঙের গাজর আজও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ করা হয় এবং ঐতিহ্যবাহী রন্ধনপ্রণালীতে ব্যবহৃত হয়। তুরস্কের আদানা অঞ্চলে কালো গাজরের চাষ বিশেষভাবে পরিচিত, যা ঐতিহ্যবাহী 'সালগাম সুয়ু' (Salgam Suyu) নামক পানীয় তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এই কালো গাজরের চাষ গত ১৫ বছরে প্রায় ৫,০০০ থেকে ২,০০,০০০ টন পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এর ক্রমবর্ধমান চাহিদার ইঙ্গিত দেয়। গাজরের এই দীর্ঘ এবং বৈচিত্র্যময় যাত্রা দেখায় যে কীভাবে একটি সাধারণ সবজি বিশ্বজুড়ে মানুষের সংস্কৃতি এবং খাদ্যাভ্যাসের সাথে মিশে গেছে, যা এর রন্ধনসম্পর্কীয় গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।