ফরাসি চলচ্চিত্র জগৎ একটি নতুন ডিস্টোপিয়ান থ্রিলার, সেড্রিক জিমেনেজের 'Chien 51'-এর মুক্তির জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। ২০২৫ সালের ১৫ অক্টোবর ফ্রান্সের প্রেক্ষাগৃহগুলিতে এই চলচ্চিত্রটির প্রিমিয়ার হওয়ার কথা রয়েছে। এটি লরেন্ট গডের লেখা একই নামের একটি উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত, যা ২০২২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। ছবিটি ইতিমধ্যেই ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে প্রতিযোগিতার বাইরে প্রদর্শিত হয়েছে এবং সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
এই ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন জিল লেলুশ এবং অ্যাডেল এক্সার্কোপোলোস। কাহিনীর প্রেক্ষাপট হলো ২০৪৫ সালের প্যারিস, যেখানে শহরের পরিবেশ আমূল পরিবর্তিত হয়েছে। সেখানকার জনসংখ্যাকে কঠোরভাবে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে, যা নাগরিকদের সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী নির্ধারিত। এই জটিল ও স্তরবদ্ধ সমাজব্যবস্থাটি সম্পূর্ণভাবে সর্বশক্তিমান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) 'আলমা' (ALMA) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এই আলমা শুধু সমাজকেই নয়, পুলিশের কার্যক্রমেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। এই বিভাজনমূলক কাঠামোই ছবিটির মূল ভিত্তি, যা ভবিষ্যতের এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে।
কাহিনীর সূত্রপাত ঘটে 'আলমা'-এর নির্মাতার হত্যাকাণ্ডের পর। এই চাঞ্চল্যকর অপরাধের তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সম্পূর্ণ বিপরীত স্বভাবের দুই কর্মকর্তাকে। এদের মধ্যে একজন হলেন জেম স্পারাক, যিনি সিস্টেমের প্রতি বীতশ্রদ্ধ এবং সমাজের বর্জিতদের বাসস্থান জোন ৩-এর বাসিন্দা। অন্যজন হলেন সালিয়া ম্যালবার্গ, যিনি জোন ২-এর একজন অভিজাত তদন্তকারী। তাদের এই বাধ্যবাধকতামূলক সহযোগিতা দ্রুতই একটি বিশাল ষড়যন্ত্রের পর্দা উন্মোচন করে, যা এই খণ্ডিত বিশ্বব্যবস্থার মূল ভিত্তিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। এই তদন্তের মধ্য দিয়ে দর্শকরা প্যারিসের অন্ধকার দিক এবং সামাজিক বৈষম্যের গভীরতা দেখতে পান।
পরিচালক জিমেনেজ, যিনি এর আগে 'বিএসি নর্ড' (BAC Nord) এবং 'নভেম্বর' (Novembre)-এর মতো টানটান থ্রিলার উপহার দিয়েছেন, তিনি অলিভিয়ের দেমাঙ্গেলের (Olivier Demangel) সাথে যৌথভাবে এই চিত্রনাট্যটি তৈরি করেছেন। ছবিটি জিমেনেজের 'পুলিশ' ট্রিলজির একটি অংশ, যা ২০২০ সালে শুরু হয়েছিল। এই ট্রিলজিটি মূলত পুলিশের কাজের নৈতিকতা এবং সমাজের সঙ্গে তাদের সংঘাত নিয়ে তৈরি। এই নতুন কিস্তিটির নির্মাণ ব্যয় অনুমান করা হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ মিলিয়ন ইউরো, যা এর ব্যাপকতা প্রমাণ করে।
সমালোচকরা জিমেনেজের আত্মবিশ্বাসী পরিচালনা এবং প্রধান অভিনেতাদের শক্তিশালী যুগলবন্দীর প্রশংসা করেছেন, যা দর্শকদের মনোযোগ ধরে রাখে। যদিও কেউ কেউ এটিকে 'ব্লেড রানার' (Blade Runner)-এর মতো ক্লাসিক ঘরানার চলচ্চিত্রের তুলনায় কিছুটা গৌণ বলে মনে করেছেন, তবুও এর গভীরতা অনস্বীকার্য। ছবিটি একটি চিত্তাকর্ষক দৃশ্যপট উপস্থাপন করে, যা দর্শকদের ভাবিয়ে তোলে: কীভাবে একটি আবেগহীন অ্যালগরিদম এত সহজে সামাজিক কাঠামোকে প্রতিস্থাপন করতে পারে। এটি আধুনিক সমাজের নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাধীনতার প্রশ্নগুলিকে সামনে নিয়ে আসে, যা এটিকে কেবল একটি অ্যাকশন থ্রিলার না রেখে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ভাষ্যে পরিণত করে।