মন্টেনিগ্রোর চলচ্চিত্র 'ওব্রাজ' (Образ), যা পরিচালনা করেছেন নিকোলা ভুকচেভিচ, তার সফল উৎসব যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। সম্প্রতি, সান দিয়েগো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এটি সেরা পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য 'দর্শক পুরস্কার' (Audience Award) অর্জন করেছে। এই পুরস্কার প্রাপ্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রে ছবিটির প্রথম প্রদর্শনী বা প্রিমিয়ার। আয়োজকরা মনে করেন, চলচ্চিত্রটিতে যে বিষয়বস্তুগুলি তুলে ধরা হয়েছে, তার সর্বজনীন আবেদন এবং বিভিন্ন ধরনের দর্শকদের উপর এর গভীর মানসিক প্রভাবই এই সাফল্যের মূল কারণ।
শিক্ষাবিদ জ়ুভদিয়া হোজিচ (Zuvdija Hodžić)-এর সাহিত্যকর্মের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত এই ছবিটি ইতিমধ্যেই আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। মন্টেনিগ্রোর পক্ষ থেকে এটি ২০২৫ সালের অস্কার পুরস্কারের 'সেরা আন্তর্জাতিক ফিচার ফিল্ম' (Best International Feature Film) বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনীত হয়েছে। 'ওব্রাজ'-এর উৎসব যাত্রা ১৮টি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী অতিক্রম করেছে, যার মধ্যে কায়রো এবং গোয়ার মতো 'এ' ক্যাটাগরির বিশ্বমানের ইভেন্টগুলিতে অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচনও অন্তর্ভুক্ত। সান দিয়েগোতে ছবিটি আরও ২৩টি আন্তর্জাতিক কাজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেছিল, যার মধ্যে লুক গুয়াদাগনিনো-এর মতো পরিচালকদের নির্মিত চলচ্চিত্রও ছিল। সান দিয়েগো উৎসব সাধারণত স্বাধীন চলচ্চিত্রগুলির উপর জোর দেয়, যা তীব্র সামাজিক সমস্যা, মানবাধিকার এবং অভিবাসন সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করে—আর এই কারণেই ছবিটি সেখানে স্থান করে নেয়।
নির্বাহী প্রযোজক মিলোরাদ রাদেনোভিচ (Milorad Radenović) জোর দিয়ে বলেছেন যে সান দিয়েগো থেকে প্রাপ্ত এই সম্মাননা চলচ্চিত্রটির শৈল্পিক মূল্য এবং বিশ্বব্যাপী দর্শকদের কাছে পৌঁছানোর ক্ষমতার একটি শক্তিশালী প্রমাণ, যা মন্টেনিগ্রোতে এর পরিবেশনার জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। ছবিটির গল্প দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বলকান অঞ্চলের পটভূমিতে আবর্তিত হয়েছে। এটি একটি তীব্র নাটক, যেখানে নৈতিক পছন্দের প্রশ্নটি মুখ্য: একজন নায়ককে সিদ্ধান্ত নিতে হয় যে তিনি নিজের পরিবারের মঙ্গলকে ঝুঁকিতে ফেলে অন্য ধর্মের একটি শিশুর জীবন ও নিজের সম্মান রক্ষা করবেন কিনা।
পরিচালক নিকোলা ভুকচেভিচ, যিনি একজন সুপরিচিত চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব এবং অধ্যাপক, এর আগেও ২০১৪ সালে অস্কারের জন্য তার দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। সান দিয়েগোর এই সাফল্য প্রমাণ করে যে নৈতিক সাহসিকতার গল্পগুলি সাংস্কৃতিক সীমানা নির্বিশেষে মানুষের মনে সাড়া জাগায়। ছবিটির বিশ্ব প্রিমিয়ার হয়েছিল জার্মানির কটবাসে (Cottbus)। এর আগে এটি জারাগোসা উৎসবে পরিচালনা ও চিত্রনাট্যের জন্য স্বীকৃতি লাভ করেছিল। এই চলচ্চিত্রটি মন্টেনিগ্রো, সার্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া এবং জার্মানির যৌথ প্রযোজনা। এটি দর্শকদের সামনে চিরন্তন প্রশ্ন উত্থাপন করে—যে কোনো প্রতিকূলতার মুখে মানবতাকে ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তা কী এবং কীভাবে তা বজায় রাখা যায়।
