প্রায় ২৫ বছর আগে মুক্তি পেলেও 'দ্য ম্যাট্রিক্স' সিনেমাটি আজও চলচ্চিত্র জগতে তার প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো ‘বুলেট টাইম’ (Bullet Time) দৃশ্যটি। এই বিশেষ ইফেক্টটি কেবল একটি চাক্ষুষ চমক ছিল না, বরং এটি ছিল গল্পের একটি গভীর রূপক।
চলচ্চিত্রটির ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস সুপারভাইজার জন গেটা (John Gaeta) সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, নিও (Neo) যখন বুলেট এড়িয়ে যায়, তখন সেটি কেবল একটি অ্যাকশন দৃশ্য ছিল না। এটি ছিল নিও-র মনস্তাত্ত্বিক জাগরণ এবং আত্ম-উপলব্ধির প্রতীক। এই দৃশ্যের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে যে নিও কীভাবে সিমুলেশন বা ম্যাট্রিক্সের নিয়মগুলোকে অতিক্রম করে নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারে। এই যুগান্তকারী দৃশ্যটি দর্শকদের নিও-র সেই জাগরণের অভিজ্ঞতা দেয়, যখন সে তার চারপাশের পরিবেশের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ বুঝতে পারে।
অস্কার বিজয়ী জন গেটা বর্তমানে তার প্ল্যাটফর্ম Escape.AI-এর মাধ্যমে চলচ্চিত্র নির্মাণের ভবিষ্যৎ নিয়ে কাজ করছেন। তিনি 'নিও-সিনেমা' (Neo-cinema) ধারণাটিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) গল্প বলার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। গেটা জোর দিয়ে বলেন যে, এআই (AI) কেবল একটি হাতিয়ার এবং এর কোনো অর্থ নেই মানুষের সৃজনশীলতা ছাড়া। তিনি বলেন, “মানুষের লেখক ছাড়া এআই-এর কোনো অর্থ নেই।”
‘বুলেট টাইম’ ইফেক্টটি তৈরি করার জন্য প্রায় ১২০টি স্থির ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছিল, যা একটি বৃত্তাকারে সাজানো ছিল। প্রতিটি ক্যামেরা নির্দিষ্ট ক্রমে ছবি তুলত, যা একটি স্থির মুহূর্তকে বিভিন্ন কোণ থেকে ধারণ করত। পরবর্তীতে এই ছবিগুলোকে একত্রিত করে এমন একটি বিভ্রম তৈরি করা হয় যেন ক্যামেরাটি সময়ের মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক গতিতে চলছে, কিন্তু দৃশ্যটি ধীর গতিতে এগোচ্ছে। এই কৌশলটি, যা গেটা এবং Manex Visual Effects স্টুডিও দ্বারা তৈরি হয়েছিল, সেই সময়ে চলচ্চিত্র জগতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিল। এটি কেবল একটি প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনই ছিল না, বরং এটি নিও-র মানসিক অবস্থার একটি চাক্ষুষ উপস্থাপনা ছিল, যেখানে সে বাস্তবতার নিয়মগুলোকে নিজের ইচ্ছানুযায়ী পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছিল।
জন গেটা বর্তমানে Escape.AI প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে 'নিও-সিনেমা' নামক একটি নতুন ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণে মনোনিবেশ করেছেন। এই ধারায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং গেম ইঞ্জিন ব্যবহার করে গল্প বলার নতুন উপায় অন্বেষণ করা হচ্ছে। গেটা বিশ্বাস করেন যে, এই প্রযুক্তিগুলো চলচ্চিত্র নির্মাতাদের আরও উদ্ভাবনী উপায়ে গল্প বলতে এবং দর্শকদের আরও নিমগ্ন অভিজ্ঞতা দিতে সাহায্য করবে। তিনি মনে করেন, এআই (AI) চলচ্চিত্র নির্মাণের ভবিষ্যৎ এবং এটি নির্মাতাদের সৃজনশীলতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।