এমি-পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক লিন্ডসে মাস্টিস সম্প্রতি তাঁর নতুন কাজ প্রকাশ করেছেন, যা সঙ্গীত শিল্পের উপর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-এর প্রভাব নিয়ে তৈরি। ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ মিউজিক রিটেইলার্স (NAMM) প্রদর্শনী চলাকালীন চিত্রায়িত এই তথ্যচিত্রটি অ্যালগরিদমের যুগে খাঁটি শিল্পের সম্ভাব্য অবমূল্যায়ন নিয়ে একটি গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করে। মাস্টিস শিল্পের মধ্যে বিদ্যমান তীব্র দ্বন্দ্বের উপর আলোকপাত করেছেন: একদিকে এআই ব্যবহার করে প্রক্রিয়াগুলিকে অনুকূল করার চেষ্টা, অন্যদিকে শৈল্পিক অখণ্ডতা বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা। এই দুটি বিপরীতমুখী শক্তির টানাপোড়েনই তাঁর কাজের মূল বিষয়বস্তু, যা শিল্পীদের সৃজনশীল ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
এই চলচ্চিত্রে জ্যাকসন ব্রাউন এবং রোজান ক্যাশের মতো স্বনামধন্য শিল্পীদের অকপট মতামত তুলে ধরা হয়েছে। এই প্রবীণ শিল্পীরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে যন্ত্র দ্বারা তৈরি কাজগুলিতে সেই মানবিক গভীরতার অভাব থাকতে পারে, যা কেবল মানুষের জীবন অভিজ্ঞতা এবং আবেগ থেকেই জন্ম নেয়। যেকোনো শৈলীতে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কম্পোজিশন তৈরি করতে সক্ষম জেনারেটিভ অ্যালগরিদমগুলির আবির্ভাব 'সঙ্গীত রচনা'র ধারণাকেই মৌলিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। ওপেনএআই জুকবক্স (OpenAI Jukebox) বা গুগল মিউজিকএলএম (Google MusicLM)-এর মতো নিউরাল নেটওয়ার্কগুলি ইতিমধ্যেই বিশ্বাসযোগ্য ফলাফল দেখাচ্ছে। এর ফলে মালিকানা এবং মানব অংশগ্রহণ ছাড়া এই ধরনের সঙ্গীতকে শিল্প হিসাবে বিবেচনা করা যায় কিনা—এই মৌলিক প্রশ্নটি সামনে এসেছে।
সারা বিশ্বের সৃজনশীল মহলে নৈতিক দ্বিধা এবং কপিরাইট সংক্রান্ত আলোচনা সক্রিয়ভাবে চলার কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। যদি একজন সুরকার একটি নিউরাল নেটওয়ার্ককে সহায়ক সরঞ্জাম হিসাবে ব্যবহার করেন, প্যারামিটার সেট করেন এবং সম্পাদনা করেন, তবে তিনি রচয়িতা হিসাবে দাবি করতে পারেন। তবে, 'সরঞ্জাম' এবং 'সহ-স্রষ্টা'র মধ্যেকার সীমারেখাটি এখনও অস্পষ্ট ও ভঙ্গুর। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে শিল্পের বিদ্যমান সমস্যাগুলি—যেমন শিল্পীদের জন্য কম রয়্যালটি এবং বিষয়বস্তুর একঘেয়েমি—এর মধ্যে এআই একটি নতুন চ্যালেঞ্জ যুক্ত করেছে: এটি এমন 'ভাইরাল' হিট তৈরি করার ক্ষমতা রাখে যা সম্ভাব্যভাবে জীবিত সৃজনশীল মানুষদের কাজকে প্রান্তিক করে দিতে পারে।
মাস্টিস একটি ভারসাম্যপূর্ণ পদ্ধতির আহ্বান জানিয়েছেন, যেখানে স্পষ্ট নৈতিক মানদণ্ড এবং স্বচ্ছতার নীতি তৈরি করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এটি কেবল একটি প্রযুক্তিগত সমস্যা নয়, বরং সমাজ তার সাংস্কৃতিক উপলব্ধি কী দিয়ে পুষ্ট করবে, সেই পছন্দের মুহূর্ত। একই সময়ে, কিছু শিল্পী জোর দিয়ে বলেছেন যে বাজারে যন্ত্র-সৃষ্ট পণ্যের আধিক্যের পরিস্থিতিতে, মানুষের হাত ও হৃদয় দ্বারা তৈরি জিনিসের মূল্য বহুগুণ বেড়ে যেতে পারে। এই মানব-সৃষ্ট শিল্প তখন একচেটিয়া এবং অত্যন্ত কাঙ্ক্ষিত বস্তুতে পরিণত হবে, যা এআই-এর যুগেও নিজস্ব গুরুত্ব বজায় রাখবে।
