একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, প্রধান ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তাদের সাপ্লাই চেইনকে ডিকার্বনাইজ করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। "হোয়াট ফুয়েলস ফ্যাশন? ২০২৫" শীর্ষক এই গবেষণাটি ২০০টি বৃহৎ ফ্যাশন কোম্পানির উপর মূল্যায়ন চালিয়েছে এবং এতে দেখা গেছে যে, উৎপাদন প্রক্রিয়ার জন্য ক্লিন হিট প্রযুক্তি গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি গুরুতর ঘাটতি রয়েছে, যদিও এই প্রযুক্তিগুলো সহজলভ্য। মাত্র ৬% ব্র্যান্ড উচ্চ-তাপমাত্রার প্রক্রিয়াগুলোকে বিদ্যুতায়িত করার প্রচেষ্টা রিপোর্ট করেছে এবং মাত্র ১০% তাদের সাপ্লাই চেইনের জন্য নবায়নযোগ্য শক্তির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এই ধীরগতি কেবল কর্মীদের স্বাস্থ্যকেই প্রভাবিত করছে না, বরং জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও বাধা সৃষ্টি করছে।
ফ্যাশন রেভলিউশনের এই প্রতিবেদনটি আরও প্রকাশ করেছে যে, ডিকার্বনাইজেশন প্রচেষ্টা সম্পর্কে স্বচ্ছতার সামগ্রিক হ্রাস ঘটেছে। গত বছরের তুলনায় ব্র্যান্ডগুলোর গড় স্কোর ১৮% থেকে কমে ১৪% হয়েছে, যা একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা নির্দেশ করে। ক্লিন হিট, যা উৎপাদনের জন্য নবায়নযোগ্য, জীবাশ্ম-মুক্ত শক্তির ব্যবহারকে বোঝায়, এটিকে নির্গমন হ্রাসের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই প্রযুক্তি গ্রহণ না করার ফলে পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এবং ব্র্যান্ডগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থতার সম্ভাবনা বাড়ছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শক্তি ও জলবায়ু নীতির অধ্যাপক জ্যান রোজেনো-এর মতো বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন যে জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প প্রযুক্তি ইতিমধ্যেই বিদ্যমান, কিন্তু সেগুলোকে বড় আকারে প্রয়োগ করার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং তহবিলের অভাব রয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে টেক্সটাইল শিল্পের জীবাশ্ম জ্বালানি সম্পূর্ণরূপে বর্জন করার সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ প্রক্রিয়াকরণের তাপমাত্রা কদাচিৎ ২৫০°C ছাড়িয়ে যায়।
প্রতিবেদনে সর্বোচ্চ স্কোর অর্জন করেছে H&M গ্রুপ, ৭১% নিয়ে। কিছু সূত্র ইঙ্গিত দেয় যে H&M গ্রুপ ইতিমধ্যেই ২০২৪ সালে ৯৬% নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ ব্যবহার করেছে, যার লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০% অর্জন করা। অন্যদিকে, Aeropostale এবং Forever 21 এর মতো ব্র্যান্ডগুলো শূন্য স্কোর পেয়েছে, যা তাদের পরিবেশগত দায়বদ্ধতার অভাবকে স্পষ্ট করে তোলে। এই পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় কর্মীদের সহায়তার জন্য একটি জাস্ট ট্রানজিশন ফ্রেমওয়ার্কের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এই রূপান্তরটি কেবল পরিবেশের জন্যই নয়, বরং যারা এই শিল্পের সাথে জড়িত, তাদের জন্যও একটি সুষ্ঠু এবং ন্যায়সঙ্গত হওয়া উচিত।
বিশ্বজুড়ে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে, ভোক্তারা ব্র্যান্ডগুলোর কাছ থেকে আরও বেশি দায়িত্বশীলতা আশা করছে। সাপ্লাই চেইনে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন আর ঐচ্ছিক নয়, বরং এটি একটি অপরিহার্য প্রয়োজন। যেসব ব্র্যান্ড এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পিছিয়ে থাকবে, তারা কেবল তাদের সুনামই হারাবে না, বরং বাজারের প্রতিযোগিতায়ও পিছিয়ে পড়বে। এই পরিস্থিতি ফ্যাশন শিল্পকে একটি নতুন পথে চালিত করার সুযোগ তৈরি করছে, যেখানে পরিবেশগত স্থায়িত্ব এবং সামাজিক ন্যায়বিচার একে অপরের পরিপূরক।