ইউরোপীয় কমিশন (European Commission) বিলাসদ্রব্যের বাজারে কঠোর এক প্রতিযোগিতা-বিরোধী রায় ঘোষণা করেছে। তারা Gucci, Chloé, এবং Loewe-এর মতো বিখ্যাত ফ্যাশন হাউসগুলোর উপর সম্মিলিতভাবে ১৫৭ মিলিয়ন ইউরোরও বেশি জরিমানা আরোপ করেছে। এই শাস্তিমূলক পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য ছিল সেইসব প্রতিযোগিতা-বিরোধী কার্যকলাপ দমন করা, যা কৃত্রিমভাবে ভোক্তাদের জন্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করছিল এবং বাজারের বিকল্প সীমিত করছিল। অভিযোগের সারমর্ম হলো, স্বাধীন খুচরা বিক্রেতাদের উপর বেআইনিভাবে মূল্য নির্ধারণের নীতি চাপানো হয়েছিল, যা স্বাভাবিক বাজার প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে বাধাগ্রস্ত করছিল।
তদন্তে উঠে এসেছে যে এই তিনটি বৃহৎ শিল্প সংস্থা, যদিও তারা একে অপরের থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করছিল, তবুও তারা তাদের অংশীদারদের বাণিজ্যিক কৌশলে হস্তক্ষেপ করেছিল। তাদের আরোপিত বিধিনিষেধগুলোর মধ্যে ছিল: প্রস্তাবিত খুচরা মূল্য কঠোরভাবে অনুসরণ করার বাধ্যবাধকতা, সর্বোচ্চ ছাড়ের উপর সীমা নির্ধারণ এবং কখন বিক্রি শুরু হবে তার সময়কাল নির্ধারণ করে দেওয়া। এই ধরনের কৌশল বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করার একটি সুস্পষ্ট প্রচেষ্টা ছিল।
কমিশন আরও স্পষ্ট করেছে যে, কিছু ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডগুলো পরিবেশকদের সাময়িকভাবে যেকোনো ধরনের মূল্যছাড় দেওয়া থেকেও সম্পূর্ণভাবে বিরত রাখতে সক্ষম হয়েছিল। এই পদক্ষেপগুলোর উদ্দেশ্য ছিল অংশীদারদের বাধ্য করা যাতে তারা ব্র্যান্ডগুলোর নিজস্ব সরাসরি বিক্রয় চ্যানেলে প্রযোজ্য মূল্য এবং শর্তাবলী কঠোরভাবে মেনে চলে। এভাবে তারা নিশ্চিত করতে চেয়েছিল যে তাদের নিজস্ব স্টোর এবং স্বাধীন বিক্রেতাদের মধ্যে কোনো মূল্য পার্থক্য না থাকে।
জরিমানাগুলো নিম্নরূপভাবে বণ্টিত হয়েছে: Kering-এর মালিকানাধীন Gucci সবচেয়ে বড় অঙ্কের জরিমানা পেয়েছে—১১৯.৭ মিলিয়ন ইউরো। তাদের লঙ্ঘন এপ্রিল ২০১৫ থেকে এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। Richemont-এর অধীনে থাকা Chloé-কে ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে এপ্রিল ২০২৩ সময়কালের জন্য ১৯.৭ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা করা হয়েছে। আর LVMH পোর্টফোলিওর Loewe-কে ডিসেম্বর ২০১৫ থেকে এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত লঙ্ঘনের জন্য ১৮ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা দিতে হবে।
এটি উল্লেখ করা জরুরি যে, এই তিনটি সংস্থাই নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাথে সহযোগিতা করেছে এবং তাদের ত্রুটি স্বীকার করে নিয়েছে। ফলস্বরূপ, তাদের প্রাথমিক জরিমানার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা হয়েছে। অন্যদিকে, Kering গ্রুপ নিশ্চিত করেছে যে এই মামলার সাথে সম্পর্কিত আর্থিক ঝুঁকিগুলো তারা ২০২৫ সালের প্রথমার্ধের (H1 2025) আর্থিক প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই পদক্ষেপটি ইঙ্গিত দেয় যে তারা ভবিষ্যতে বাজারের নিয়মের সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে প্রস্তুত এবং আইনি জটিলতা এড়াতে চাইছে।
ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) প্রতিনিধিদের মাধ্যমে ঘোষিত এই রায়টি সমগ্র শিল্প জগতের জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা হিসেবে কাজ করছে। এই বার্তাটি হলো: ইউরোপে, ক্রেতার ক্রয়ের মাধ্যম নির্বিশেষে, মূল্য প্রতিযোগিতা প্রতিটি ভোক্তার একটি অবিচ্ছেদ্য অধিকার। কঠোর মূল্য নিয়ন্ত্রণের এই ধরনের চর্চা বন্ধ করার ফলে একটি নতুন অধ্যায় উন্মোচিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে খুচরা বিক্রেতারা তাদের বাণিজ্যিক বিচক্ষণতা প্রদর্শনের সুযোগ পাবে এবং চাহিদা ও সরবরাহের গতিশীলতার মাধ্যমে পণ্যের প্রকৃত মূল্য প্রকাশে সহায়তা হবে, যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের জন্য লাভজনক হবে।