ব্রিটিশ স্থপতি টমাস হিদারউইকের নকশায় সিউলের ‘নোডল গ্লোবাল আর্ট আইল্যান্ড’ প্রকল্পের সূচনা
সম্পাদনা করেছেন: Ек Soshnikova
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। হান নদীর বুকে অবস্থিত নোডল দ্বীপকে আন্তর্জাতিক মানের শিল্পকলা এবং নগর বিনোদনের এক প্রধান কেন্দ্রে রূপান্তরিত করার উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নিয়ে ‘নোডল গ্লোবাল আর্ট আইল্যান্ড’ প্রকল্পটি শুরু করা হয়েছে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞের জন্য সিউল কর্তৃপক্ষ ৩৭০ বিলিয়ন ওন (যা প্রায় ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমতুল্য) বরাদ্দ করেছে। ২০২৫ সালের ২১ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রকল্পের সূচনা করা হয়, যা সিউলের সাংস্কৃতিক ও বিনোদনমূলক অবকাঠামোকে বৈশ্বিক পর্যায়ে উন্নীত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
নোডল দ্বীপের অবস্থানটি অত্যন্ত কৌশলগত এবং মনোরম। এটি হান নদীর ঠিক কেন্দ্রে অবস্থিত, যা এটিকে এক অসাধারণ ভৌগোলিক সুবিধা দিয়েছে। এই স্থানটি থেকে একদিকে যেমন নদীর শান্ত প্রবাহ দেখা যায়, তেমনি অন্যদিকে শহরের আকাশরেখা এবং অসংখ্য সুপরিচিত আইকনিক ভবনের এক শ্বাসরুদ্ধকর প্যানোরামা উপভোগ করা যায়। এই অনন্য পরিবেশের কারণে, নোডল দ্বীপ শহরের বাসিন্দাদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য শহুরে জীবনের মাঝে প্রকৃতির সান্নিধ্যে এসে মানসিক প্রশান্তি লাভ করার এবং অবসর সময় কাটানোর এক আদর্শ গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত।
‘নোডল গ্লোবাল আর্ট আইল্যান্ড’ এর জন্য আয়োজিত আন্তর্জাতিক নকশা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছে ব্রিটিশ স্থপতি টমাস হিদারউইকের (Thomas Heatherwick) জমা দেওয়া ‘সাউন্ডস্কেপ’ (Soundscape) নামের প্রকল্পটি। এই প্রতিযোগিতায় হিদারউইক স্টুডিওর উদ্ভাবনী ধারণাটি বিচারকদের মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং দ্বীপটির সামগ্রিক রূপান্তরে এটিই মূল ভিত্তি হিসেবে গৃহীত হয়।
হিদারউইক স্টুডিওর ‘সাউন্ডস্কেপ’ ধারণাটি মূলত শব্দ তরঙ্গের বক্রতাকে অনুকরণ করে তৈরি একটি বায়বীয় হাঁটার পথ বা ওয়াকওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা করে। এই কাঠামোটি বেশ কয়েকটি ছোট ‘ভাসমান দ্বীপ’ নিয়ে গঠিত হবে, যা একটি সেতুর মাধ্যমে একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকবে। এই বায়বীয় পথ ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় দর্শনার্থীরা নদী এবং শহরের দিগন্তের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করার এক বিরল সুযোগ পাবেন।
এই স্থাপত্য রূপান্তরের কেন্দ্রীয় উপাদান হলো বায়বীয় পথচারী সেতুটি, যা সিউলকে ঘিরে থাকা পর্বতগুলির প্রাকৃতিক রূপরেখাকে প্রতিফলিত করে। বাঁকানো স্টেইনলেস স্টিল ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে এর ঢেউ খেলানো কাঠামো, যা একটি অনন্য বহু-স্তরীয় নকশা তৈরি করেছে। এই কাঠামোটি প্রকৃতির সাথে চমৎকারভাবে মিশে গিয়ে এক ফ্যান্টাসি-সদৃশ এবং আকর্ষণীয় ল্যান্ডস্কেপ তৈরি করবে, যা দর্শনার্থীদের জন্য এক নতুন ধরনের ইন্টারেক্টিভ অভিজ্ঞতা দেবে।
এই বহু-স্তরীয় এবং জটিল স্থাপত্য প্রকল্পের নির্মাণ কাজ ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ আশা করছে যে, ২০২৮ সালের মধ্যে পুরো কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হবে এবং দ্বীপটি আনুষ্ঠানিকভাবে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। সিউল আশা করছে যে এই প্রকল্পের মাধ্যমে নোডল দ্বীপ কেবল একটি বিনোদন কেন্দ্র নয়, বরং বিশ্বজুড়ে শিল্পপ্রেমী এবং পর্যটকদের জন্য একটি নতুন আকর্ষণ হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে, যা শহরের মর্যাদা আরও বাড়িয়ে তুলবে।
উৎসসমূহ
The Korea Times
C3GLOBE
SPACE
The Korea Times
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
