ঐতিহ্যের নতুন দিগন্ত: গ্র্যান্ড ইজিপ্টীয়ান মিউজিয়ামের পূর্ণাঙ্গ উন্মোচন নভেম্বরে

সম্পাদনা করেছেন: Ек Soshnikova

গিজার সুবিশাল পিরামিডের পাদদেশে অবস্থিত গ্র্যান্ড ইজিপ্টীয়ান মিউজিয়াম (GEM) অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আগামী ২০২৫ সালের ৪ঠা নভেম্বর জনসাধারণের জন্য তার পূর্ণাঙ্গ দ্বার উন্মোচন করতে চলেছে। এই বিশাল স্থাপনাটির নির্মাণকার্য দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে চলার পর এটি বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রদর্শনের ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের সূচনা করছে।

আইরিশ স্থাপত্য সংস্থা হেনেঘান পেং-এর নকশায় নির্মিত এই স্থাপত্যকীর্তিটি ফারাওনিক শৈলী দ্বারা গভীরভাবে অনুপ্রাণিত, যার বিশেষত্ব হলো এর কৌণিক পিরামিড আকৃতি। ভবনটির দেওয়ালগুলি খুফু এবং মেনকাউরের পিরামিডের সঙ্গে কৌশলগতভাবে সারিবদ্ধ করা হয়েছে, যা সাংস্কৃতিক সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য স্থাপত্যগত সাফল্য হিসেবে বিবেচিত। এই জাদুঘরে এক লক্ষেরও বেশি প্রত্নবস্তু স্থান পেয়েছে, যার মধ্যে তুতানখামেনের সম্পূর্ণ সংগ্রহ প্রথমবারের মতো এক ছাদের নিচে প্রদর্শিত হবে।

এই মহৎ উদ্যোগের পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল ২০০২ সালে, যখন মিশর সরকার একটি বিশ্বব্যাপী নকশা প্রতিযোগিতার ঘোষণা করে, যেখানে ৮২টি দেশের প্রায় ১,৫৭৭টি স্থাপত্য সংস্থা তাদের ধারণা জমা দিয়েছিল। নির্মাণ কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছিল ২০০৫ সালে, কিন্তু পরিবেশগত, আর্থিক এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে, বিশেষত ২০১১ সালের আরব বসন্তের সময়, এই প্রকল্পে বহুবার বিলম্ব ঘটে। ২০১৪ সালে স্থিতিশীলতা ফিরে আসার পর আন্তর্জাতিক ঋণের সহায়তায় নির্মাণ কাজ পুনরায় গতি পায়।

এই জাদুঘরটি বিশ্বের বৃহত্তম একক সভ্যতার জন্য নিবেদিত প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর হতে চলেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই পূর্ণাঙ্গ উন্মোচনের ফলে মিশরে পর্যটকদের আগমন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে দৈনিক প্রায় ৫,০০০ থেকে ৬,০০০ দর্শক জাদুঘরটি পরিদর্শন করলেও, পূর্ণ উদ্বোধনের পর এই সংখ্যা দৈনিক ১৫,০০০ বা তারও বেশি হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। পর্যটন খাত মিশরের জিডিপিতে প্রায় ৮.৫% অবদান রাখে এবং প্রায় ২৭ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, তাই এই জাদুঘরটিকে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

তুতানখামেনের প্রায় ৫,৩৯৮টি সামগ্রী নিয়ে গঠিত সম্পূর্ণ সংগ্রহটি জাদুঘরের ৭,৫০০ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে প্রদর্শিত হবে। এই মূল্যবান নিদর্শনগুলির মধ্যে রয়েছে ফারাওয়ের সোনার তৈরি কফিন এবং রথ, যা বহু বছর ধরে সংরক্ষণের পর এখন জনসাধারণের দর্শনের জন্য প্রস্তুত। এই বিশাল সংগ্রহশালাটি মানব ইতিহাসের গভীর প্রবাহের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য, যা ভবিষ্যতের জন্য নতুন পথের ইঙ্গিত দেয়।

উৎসসমূহ

  • The National

  • My Modern Met

  • ArtDependence

  • Architectural Digest

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।