সূর্য থেকে পৃথিবীতে দ্বিগুণ আঘাত: সর্বোচ্চ স্তরের X1.2 ফ্লেয়ারের পুনরাবৃত্তি রেকর্ড
লেখক: Uliana S.
সূর্য থেকে মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো অত্যন্ত শক্তিশালী সৌর ফ্লেয়ারের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এই এক্স-ক্লাসের (X1.21) ঘটনাটি ১০ নভেম্বর ইউটিসি সময় ০৯:১৯ মিনিটে সক্রিয় অঞ্চল ৪২৭৪ থেকে উদ্ভূত হয়েছে। উল্লেখ্য, এই একই অঞ্চলটিই আগের দিনের, আরও শক্তিশালী X1.79 ফ্লেয়ারটিরও উৎস ছিল। সৌর বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন যে বর্তমান ঘটনাটি একটি অস্বাভাবিক গতিশীলতা প্রদর্শন করছে: সাধারণত এই ধরনের তীব্র ফ্লেয়ারের পরে বিকিরণের মাত্রা দ্রুত কমে যাওয়ার কথা, কিন্তু এক্ষেত্রে তা না হয়ে একটি উচ্চ মালভূমিতে স্থিতিশীল রয়েছে। সৌর পদার্থবিদ্যায়, এই ধরনের দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ বিকিরণ একটি বিশাল করোনাল মাস ইজেকশন (CME) বা সৌর প্লাজমার একটি বিশাল মেঘ নির্গমনের নির্ভরযোগ্য সূচক হিসেবে বিবেচিত হয়।
X1.2 ফ্ল্যাশ 10 নভেম্বর 2025 থেকে
পরিস্থিতির বিশেষত্ব হলো, গতকালের ফ্লেয়ার থেকে নির্গত একটি ইজেকশন ইতিমধ্যেই পৃথিবীর দিকে ধাবমান, যার গতিবেগ প্রায় ৭২০ কিলোমিটার/সেকেন্ড। এর ঠিক পিছু নিয়েছে নতুন ইজেকশনটি, যার গতিবেগ রেকর্ড ১২০০ কিলোমিটার/সেকেন্ড বলে অনুমান করা হচ্ছে। এই ঘটনাটি মহাকাশ আবহাওয়ার ক্ষেত্রে এক বিরল ও গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই ঘটনাটিকে 'নরখাদকতা' (cannibalism) হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। এর অর্থ হলো, দ্রুতগামী এবং অধিক শক্তিধর দ্বিতীয় ইজেকশনটি আন্তঃগ্রহীয় মহাশূন্যে প্রথমটিকে ধরে ফেলবে এবং শুষে নেবে, যার ফলে একটি একক, আরও শক্তিশালী প্লাজমা ফ্রন্ট তৈরি হবে।
এই প্রক্রিয়াটি রেসিং কৌশলের সাথে তুলনীয়, যেখানে অগ্রগামী রেসার বাতাসের বাধা অতিক্রম করতে শক্তি ব্যয় করে, আর পিছনের রেসার তৈরি হওয়া বায়ুগতীয় অঞ্চলকে কাজে লাগিয়ে সুবিধা নেয় এবং গতি বাড়ায়। মডেলগুলির তথ্য অনুযায়ী, এই একত্রিত প্লাজমা ফ্রন্টটি ১১ এবং ১২ নভেম্বরের সন্ধিক্ষণে পৃথিবীর কাছাকাছি পৌঁছাবে। ১১ নভেম্বর ইউটিসি সময় প্রায় ১৭:০০ মিনিটে পৃথিবীর চৌম্বকমণ্ডলের (magnetosphere) সাথে এর প্রথম সংঘর্ষের সম্ভাবনা রয়েছে।
যদিও গতিপথের পশ্চিম দিকে বিচ্যুতি থাকার কারণে পৃথিবীতে সরাসরি আঘাত হানার সম্ভাবনা কম, তবুও মূল এবং সবচেয়ে শক্তিশালী আঘাতটি রাতের বেলাতেই অনুভূত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর ফলস্বরূপ, আমাদের গ্রহ গত কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূ-চৌম্বকীয় গোলযোগের সম্মুখীন হতে পারে। এই তীব্র গোলযোগের ফলে মধ্য অক্ষাংশেও মেরুজ্যোতি (aurora borealis) দৃশ্যমান হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যা সাধারণত উচ্চ অক্ষাংশেই দেখা যায়। পাশাপাশি, এই সৌর ঝড় যোগাযোগ ব্যবস্থা, স্যাটেলাইট অপারেশন এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার (power grid) অবকাঠামোতে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই বিদ্যুৎ ব্যবস্থার পরিচালনাকারীদের এই সময়ে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে এবং সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
