নতুন গবেষণা অনুসারে, সূর্যের সৌর শিখার (solar flares) মধ্যে থাকা কণাগুলো পূর্বে যা ভাবা হতো তার চেয়ে প্রায় ৬.৫ গুণ বেশি উত্তপ্ত হতে পারে। সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of St Andrews) গবেষকদের এই যুগান্তকারী আবিষ্কারটি প্রায় ৫০ বছর ধরে অমীমাংসিত থাকা একটি জ্যোতির্পদার্থবিদ্যার রহস্যের সমাধানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এই গবেষণাটি গত ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে 'দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স'-এ (The Astrophysical Journal Letters) প্রকাশিত হয়েছে।
সৌর শিখা হলো সূর্যের বাইরের বায়ুমণ্ডলে হঠাৎ করে ঘটা তীব্র শক্তির বিস্ফোরণ, যা এর কিছু অংশকে ১০ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করে তোলে। এই ঘটনাগুলো পৃথিবীর দিকে আসা সৌর এক্স-রে (X-rays) এবং বিকিরণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেয়, যা মহাকাশযান, নভোচারী এবং পৃথিবীর উপরের বায়ুমণ্ডলের জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত ও পরিসংখ্যান স্কুলের (School of Mathematics and Statistics) সৌর তত্ত্বের সিনিয়র প্রভাষক ড. আলেকজান্ডার রাসেল (Dr Alexander Russell) এবং তার দল এই গবেষণাটি পরিচালনা করেন। তারা দেখেছেন যে সৌর শিখার প্লাজমায় (solar plasma) থাকা আয়ন (ions) বা ধনাত্মক চার্জযুক্ত কণাগুলো ইলেকট্রনের (electrons) চেয়ে অনেক বেশি উত্তপ্ত হতে পারে, যা পূর্বে ভাবা হতো এর চেয়ে ৬.৫ গুণ বেশি। এই আয়নগুলো শিখার মোট প্লাজমার প্রায় অর্ধেক গঠন করে এবং এদের তাপমাত্রা ৬০ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি।
এই আবিষ্কারটি 'ম্যাগনেটিক রিকানেকশন' (magnetic reconnection) নামক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যেখানে চৌম্বকীয় শক্তি হঠাৎ করে তাপ ও গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এই প্রক্রিয়াটি মহাকাশের বিভিন্ন পরিবেশে এবং কম্পিউটার সিমুলেশনেও নিশ্চিত করা হয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে, সৌর পদার্থবিদরা মনে করতেন যে সৌর শিখার আয়ন এবং ইলেকট্রন একই তাপমাত্রায় থাকে। কিন্তু আধুনিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ড. রাসেলের দল দেখতে পেয়েছেন যে, শিখার গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে আয়ন ও ইলেকট্রনের তাপমাত্রার পার্থক্য কয়েক দশক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
এই নতুন ধারণাটি সৌর শিখার বর্ণালীর রেখাগুলোর (flare spectral lines) প্রস্থের ব্যাখ্যা দিতে পারে, যা এতদিন জ্যোতির্পদার্থবিদদের কাছে একটি রহস্য ছিল। পূর্বের তত্ত্বগুলো এই অতিরিক্ত প্রস্থের কারণ হিসেবে অস্থিরতাকে (turbulence) দায়ী করলেও, নতুন গবেষণা অনুযায়ী এই অতি উত্তপ্ত আয়নগুলোই এর মূল কারণ হতে পারে। এই নতুন গবেষণা সৌর শিখার গতিবিদ্যা এবং মহাকাশ আবহাওয়ার (space weather) উপর এর প্রভাব সম্পর্কে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। সৌর শিখা থেকে নির্গত উচ্চ-শক্তির কণা এবং বিকিরণ পৃথিবীর যোগাযোগ ব্যবস্থা, জিপিএস (GPS) সংকেত এবং স্যাটেলাইটগুলোর জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এই আবিষ্কার মহাকাশযান নকশা, নভোচারীদের জন্য বিকিরণ ঝুঁকি মূল্যায়ন এবং মহাকাশ আবহাওয়ার পূর্বাভাসকে আরও নির্ভুল করতে সহায়ক হবে। এটি মহাবিশ্বের সাথে পৃথিবীর গভীর সংযোগের উপরও আলোকপাত করে।