ভারতের চন্দ্র অভিযান 'চন্দ্রযান-২' মহাকাশ বিজ্ঞানে এক যুগান্তকারী বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি অর্জন করেছে। তারা ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সূর্যের করোণাল মাস ইজেকশন (CME)-এর আঘাতের ফলে চাঁদের এক্সোস্ফিয়ারে সৃষ্ট প্রভাব সরাসরি পর্যবেক্ষণ ও নথিভুক্ত করেছে। ২০২৪ সালের ১০ই মে তারিখে সংঘটিত এই ঘটনাটি এমন মহাজাগতিক বস্তুগুলির প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে সরাসরি পরীক্ষামূলক তথ্য সরবরাহ করেছে, যাদের শক্তিশালী বায়ুমণ্ডলীয় বা চৌম্বকীয় সুরক্ষা নেই, এবং যারা শক্তিশালী সৌর অগ্ন্যুৎপাতের মুখোমুখি হয়।
অরবিটার মডিউলে স্থাপিত বিশেষ যন্ত্র, 'চন্দ্র' অ্যাটমোস্ফিয়ারিক কম্পোজিশন এক্সপ্লোরার-২ (CHACE-2), প্লাজমা মেঘ যখন চাঁদের পৃষ্ঠে আঘাত করে, ঠিক সেই মুহূর্তে চাঁদের দিনের বেলার এক্সোস্ফিয়ারের ঘনত্বে দ্রুত বৃদ্ধি এবং সামগ্রিক চাপ বৃদ্ধির বিষয়টি রেকর্ড করেছে। ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ISRO)-এর প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, এই অত্যন্ত পাতলা আবরণে নিরপেক্ষ পরমাণু এবং অণুর ঘনত্ব স্বাভাবিক মাত্রার তুলনায় এক দশমাংশের বেশি বেড়ে গিয়েছিল। এই প্রক্রিয়াটি, যেখানে সৌর প্লাজমা চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে পরমাণুগুলিকে 'বের করে আনে' এবং এক্সোস্ফিয়ারকে সমৃদ্ধ করে, তা সম্পূর্ণরূপে তাত্ত্বিক মডেলগুলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যদিও পূর্বে এর কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
চাঁদের কোনো বৈশ্বিক চৌম্বক ক্ষেত্র না থাকায়, এটি অরক্ষিত মহাকাশীয় পৃষ্ঠের উপর সৌর কার্যকলাপের প্রভাব অধ্যয়নের জন্য একটি অনন্য প্রাকৃতিক পরীক্ষাগার হিসেবে কাজ করে। ঘন বায়ুমণ্ডলের অনুপস্থিতি সৌর বায়ু এবং করোণাল ইজেকশনের কণাগুলিকে চাঁদের রেগোলিথের (মাটি) সাথে অবাধে মিথস্ক্রিয়া করার সুযোগ দেয়। এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণটি, যা ২০২৫ সালের ১৬ই আগস্ট জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল, তা চন্দ্রের পরিবেশের গতিশীলতা এবং সৌর-চন্দ্র মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে আরও গভীর করে তুলবে।
এই আবিষ্কার ভবিষ্যতের দীর্ঘমেয়াদী মহাকাশ অভিযানের জন্য সরাসরি ব্যবহারিক তাৎপর্য বহন করে। প্রকৌশলী এবং চন্দ্র ঘাঁটির স্থপতিরা এখন করোণাল মাস ইজেকশন (CME) দ্বারা সৃষ্ট পরিবেশের অস্থায়ী, কিন্তু গুরুতর পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত ঝুঁকিগুলি আরও নির্ভুলভাবে বিবেচনা করতে সক্ষম হবেন। পৃথিবীতে যেখানে সৌর ঘটনাগুলি প্রধানত যোগাযোগ নেটওয়ার্কগুলিতে বিভ্রাট ঘটায়, সেখানে চাঁদে পৃষ্ঠ এবং এর অত্যন্ত সূক্ষ্ম 'বায়ুমণ্ডলের' উপর সরাসরি প্রভাব একটি পরিমাপযোগ্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যা ভবিষ্যতের অবকাঠামো নির্মাণে অপরিহার্য।
২০১৯ সালে উৎক্ষেপিত 'চন্দ্রযান-২' মিশনের এই প্রযুক্তিগত সাফল্য, যার অরবিটারটি ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ল্যান্ডার 'বিক্রম'-এর ক্ষতি সত্ত্বেও এখনও স্বাভাবিকভাবে কাজ করে চলেছে, তা বৈজ্ঞানিক গণনাগুলির নির্ভুলতা প্রমাণ করে। এই গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যগুলি দীর্ঘমেয়াদে বিকিরণ ঝুঁকি এবং চন্দ্র অবকাঠামোর সাথে সৌর কণাগুলির মিথস্ক্রিয়া মূল্যায়নের জন্য একটি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে, যা মানবজাতির ভবিষ্যৎ চন্দ্রাভিযানকে সুরক্ষিত করবে।