X5.16 সৌর ফ্লেয়ার 11 নভেম্বর 2025
বছরের সর্বোচ্চ সৌরশিখা: প্রযুক্তির ওপর প্রভাব এবং প্রস্তুতি
লেখক: Uliana S.
সূর্যের অভ্যন্তরে উৎপন্ন বিপুল শক্তি মাঝে মাঝে পৃথিবীতে এক গভীর অনুরণন সৃষ্টি করে। সম্প্রতি সূর্যের পৃষ্ঠে এক অভূতপূর্ব তীব্রতার শিখা দেখা গেছে, যা বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী। এই মহাজাগতিক ঘটনাটি কেবল একটি দৃশ্য নয়, বরং আধুনিক প্রযুক্তিগত নির্ভরতার ওপর এক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিপাত করার সুযোগ এনে দিয়েছে। সৌর শিখা হলো সূর্যের বায়ুমণ্ডলে তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণের আকস্মিক ও তীব্র নির্গমন, যা শক্তিকে বর্ণালী আকারে মহাকাশে ছড়িয়ে দেয়।
এই বিস্ফোরণগুলো সূর্যের সক্রিয় অঞ্চলগুলোতে ঘটে, যেখানে শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রগুলোর মিথস্ক্রিয়ায় সঞ্চিত শক্তি মুক্ত হয়। এই ধরনের শক্তিশালী বিস্ফোরণ, যা 'এক্স-শ্রেণির সৌরশিখা' নামে পরিচিত, বিপুল পরিমাণ চার্জযুক্ত কণা বা প্লাজমার স্রোত সৃষ্টি করে, যা 'করোনাল মাস নির্গমন' (CME) নামেও পরিচিত। যখন এই প্লাজমার ঢেউ পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রে আঘাত হানে, তখন ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়ের সৃষ্টি হয়। এই ঝড় G1 থেকে G5 স্কেলে পরিমাপ করা হয়, যেখানে G5 হলো চরমতম স্তর। অতীতে G5 মাত্রার ঝড় ২০০৩ সালের অক্টোবরে আঘাত হেনেছিল, যা সুইডেনে বিদ্যুৎ বিপর্যয় এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বৈদ্যুতিক কাঠামোতে ক্ষতির কারণ হয়েছিল।
এই মহাজাগতিক শক্তির ঢেউ আমাদের আধুনিক জীবনের ভিত্তি, অর্থাৎ প্রযুক্তির ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন যে এই ধরনের ঘটনা কৃত্রিম উপগ্রহের সংকেত ব্যাহত করতে পারে, যা জিপিএস নেভিগেশন, মোবাইল যোগাযোগ এবং স্যাটেলাইট টেলিভিশনের মতো পরিষেবাগুলোকে বিপন্ন করতে পারে। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাওয়ার লাইন বা ট্রান্সফরমারগুলোও এই ঝড়ের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যার ফলে বিস্তৃত এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকে। রাশিয়ার বিজ্ঞানীরাও সতর্ক করেছেন যে এক্স-ক্লাশ শিখা দীর্ঘমেয়াদী বিকিরণ ঝড় সৃষ্টি করতে পারে, যা শর্ট ওয়েভ রেডিও যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
তবে এই পরিস্থিতিকে কেবল বিপদ হিসেবে না দেখে, একে আমাদের সম্মিলিত স্থিতিস্থাপকতা এবং দূরদর্শিতার পরীক্ষা হিসেবে দেখা যেতে পারে। অতীতে এমন ঝড় আঘাত হানলে মেরুজ্যোতি বা অরোরা পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের আকাশে এক অসাধারণ দৃশ্যের সৃষ্টি করেছিল। এই ধরনের ঘটনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে আমরা একটি বৃহত্তর ব্যবস্থার অংশ। আমেরিকান কর্তৃপক্ষ ২০২৪ সালের মে মাসে একটি মহাকাশ আবহাওয়া প্রস্তুতি মহড়ার আয়োজন করেছিল, যেখানে একটি কাল্পনিক ২০২৮ সালের সৌরঝড়ের পরিস্থিতিতে জরুরি পরিষেবা বিচ্ছিন্ন হলে তা মোকাবিলার কৌশল অনুশীলন করা হয়েছিল।
সূর্যের এই কার্যকলাপ বর্তমান সৌরচক্র, যা সোলার সাইকেল ২৫ নামে পরিচিত, তার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই চক্রটি ডিসেম্বর ২০১৯-এ শুরু হয়েছিল এবং এটি ২০৩০ সাল পর্যন্ত চলার কথা, যদিও এর কার্যকলাপ প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে। বিজ্ঞানীরা পূর্বে অনুমান করেছিলেন যে সর্বোচ্চ পর্যায় ২০২৫ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৬ সালের মার্চ মাসের মধ্যে আসতে পারে। এই সময়ে সূর্যের চৌম্বক ক্ষেত্র আরও অস্থির থাকবে, এবং আমরা আরও শক্তিশালী শিখা দেখতে পাব, যা আমাদের প্রযুক্তিগত কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ জানাবে। এই চ্যালেঞ্জগুলো আমাদের শেখায় যে বাহ্যিক পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি এবং সচেতনতাই হলো স্থিতিশীলতার মূল ভিত্তি।
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
