জন ক্লার্ক, মিশেল এইচ. ডেভোরেট এবং জন এম. মার্টিনিস যৌথভাবে এই বছরের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তাঁদের এই সম্মাননাটি এসেছে স্থূল কোয়ান্টাম যান্ত্রিক সুড়ঙ্গ পথ (macroscopic quantum mechanical tunnelling) এবং বৈদ্যুতিক বর্তনীতে শক্তির কোয়ান্টায়ন (energy quantization) সংক্রান্ত যুগান্তকারী গবেষণার জন্য। রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স এই পুরস্কার ঘোষণা করেছে।
এই বিজ্ঞানীরা মূলত প্রমাণ করেছেন যে কোয়ান্টাম জগতের অদ্ভুত আচরণ, যা সাধারণত কেবল পরমাণু বা অতিপারমাণবিক কণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ বলে মনে করা হতো, তা হাতের মুঠোয় ধরা যায় এমন বৃহৎ বৈদ্যুতিক বর্তনীতেও দৃশ্যমান হতে পারে। এই মৌলিক কাজ, যা ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে সম্পন্ন হয়েছিল, মূলত অতিপরিবাহী (superconducting) বর্তনী ব্যবহার করে পরিচালিত হয়েছিল। এই বর্তনীগুলিতে ইলেকট্রনগুলি শক্তি বাধা অতিক্রম করে সুড়ঙ্গ পথের মতো আচরণ করতে সক্ষম হয়েছিল, যা একটি স্থূল স্তরে কোয়ান্টাম আচরণের প্রমাণ দেয়।
পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে ক্লার্ক, যিনি ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে-এর এমেরিটাস অধ্যাপক (৮৩ বছর বয়সী), ডেভোরেট (৭২ বছর বয়সী), যিনি ইয়েল ইউনিভার্সিটি এবং ইউসি সান্তা বারবারার অধ্যাপক, এবং মার্টিনিস (৬৭ বছর বয়সী), যিনি ইউসি সান্তা বারবারার অধ্যাপক, তাঁদের সম্মিলিত পরীক্ষায় এই ধারণাটি প্রতিষ্ঠা করেন যে বিপুল সংখ্যক কণা নিয়ে গঠিত একটি ব্যবস্থা একক তরঙ্গ ফাংশন দ্বারা বর্ণিত হতে পারে। নোবেল কমিটি এই আবিষ্কারের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেছে যে, 'আজকের দিনে এমন কোনো উন্নত প্রযুক্তি নেই যা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের উপর নির্ভরশীল নয়।'
তাঁদের পরীক্ষাগুলি দেখিয়েছিল যে কোয়ান্টাম এবং চিরায়ত জগতের মধ্যেকার সীমারেখাটি সম্পূর্ণ অনড় নয়, বরং তা তাপমাত্রা, উপাদান এবং বর্তনীর নকশার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এই গবেষণা কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের একটি দীর্ঘদিনের প্রশ্নের সমাধান করেছে: একটি ব্যবস্থা কতটা বড় হতে পারে এবং তবুও কোয়ান্টাম আচরণ প্রদর্শন করতে পারে। এই বৈপ্লবিক গবেষণা কোয়ান্টাম প্রযুক্তির ভিত্তি স্থাপন করেছে, যার ফলস্বরূপ কোয়ান্টাম কম্পিউটার, সংবেদনশীল সেন্সর এবং সুরক্ষিত ক্রিপ্টোগ্রাফিক সিস্টেমের বিকাশ সম্ভব হয়েছে। বিশেষত, এই অতিপরিবাহী বর্তনীগুলি আজকের বহু কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মূল উপাদান—কিউবিটগুলির (qubits) অগ্রদূত হিসেবে কাজ করেছে। এছাড়াও, এই নীতিগুলি অতি-সংবেদনশীল পরিমাপ যন্ত্রপাতির ভিত্তি তৈরি করেছে, যেমন SQUID (Superconducting Quantum Interference Devices)।
১৯৮৪ এবং ১৯৮৫ সালে ইউসি বার্কলেতে পরিচালিত এই পরীক্ষাগুলির মূল ভিত্তি ছিল জোসেফসন জংশন (Josephson junction), যা ১৯৬২ সালে নোবেল বিজয়ী ব্রায়ান জোসেফসন দ্বারা উদ্ভাবিত হয়েছিল। এই ব্যবস্থায়, দুটি অতিপরিবাহীকে একটি অতি-পাতলা অন্তরক স্তর দ্বারা পৃথক করা হয়েছিল। চিরায়ত পদার্থবিদ্যা অনুসারে, এই ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কারেন্টকে একটি নির্দিষ্ট শক্তির বাধা অতিক্রম করতে হতো, কিন্তু প্রায় পরম শূন্য তাপমাত্রায় তাঁরা দেখেছেন যে কারেন্টটি কোয়ান্টাম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাধা ভেদ করে বেরিয়ে আসতে পারে। এই আবিষ্কার কেবল কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সর্বজনীনতাকে প্রমাণ করে না, বরং এটি প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যেখানে এখন মূল চ্যালেঞ্জ হলো এই সূক্ষ্ম কোয়ান্টাম সামঞ্জস্যকে (coherence) যথেষ্ট সময়ের জন্য বজায় রাখা। স্টকহোমে আগামী ১০ই ডিসেম্বর, ২০২৫ তারিখে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।