চীনের সান ইয়াত-সেন ইউনিভার্সিটির (Sun Yat-sen University) বিজ্ঞানীরা জল পরিশোধনের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছেন। তাঁরা একটি নতুন, পাতলা এবং স্ব-ভাসমান ফটোক্যাটালিটিক ফিল্ম তৈরি করেছেন, যা সূর্যের আলোর প্রভাবে জলকে দূষণমুক্ত করতে সক্ষম। এই উদ্ভাবনটি সম্প্রতি ‘নেচার ওয়াটার’ (Nature Water) জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
এই প্রযুক্তির মূল ভিত্তি হলো Cz-AQ নামক একটি পলিমার ফটোক্যাটালিস্ট। এটি অক্সিজেন-কেন্দ্রিক জৈব র্যাডিকেল (OCORs) তৈরি করে। সাধারণ সক্রিয় অক্সিজেন প্রজাতির (Reactive Oxygen Species) তুলনায় এই র্যাডিকেলগুলির জীবনকাল উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এই দীর্ঘস্থায়ী র্যাডিকেলগুলি দূষণকারী পদার্থ এবং অণুজীবগুলির বিরুদ্ধে আরও কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে, যা পরিশোধনের প্রক্রিয়াকে অত্যন্ত শক্তিশালী করে তোলে।
গবেষণাগারে পরিচালিত পরীক্ষায় এই ফিল্মটির কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। মাত্র ৪০ মিনিটের মধ্যে, এমনকি দুর্বল আলোতেও, ১০ লিটার মারাত্মকভাবে দূষিত জল থেকে এটি ই. কোলাই (E. coli) এবং স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস (Staphylococcus aureus) ব্যাকটেরিয়ার ৯৯.৯৯৫% এরও বেশি (যা ৪.৩ লগ-ইউনিটের বেশি) নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম হয়। এই দ্রুত এবং কার্যকর ফলাফল প্রমাণ করে যে ফিল্মটি অত্যন্ত কম সময়ে জলকে পানযোগ্য করে তুলতে পারে।
এই ফিল্মটির স্থায়িত্বও গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ৫০ বারেরও বেশি চক্রের ব্যবহারের পরেও এর কার্যকারিতা অক্ষুণ্ণ ছিল, যা এর কাঠামোগত স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দেয়। গবেষকরা জোর দিয়ে বলেছেন যে এই ধরনের প্রযুক্তি বিশেষত প্রত্যন্ত অঞ্চলে এবং দুর্যোগ-বিধ্বস্ত এলাকাগুলিতে অত্যন্ত সহায়ক হতে পারে, যেখানে অবকাঠামো স্থাপন করা কঠিন এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা যায় না। লেখকদের অনুমান অনুসারে, অনুকূল পরিস্থিতিতে এই ধরনের একটি ফিল্ম প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য নিরাপদ পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে পারে।
যদিও এই ফলাফলগুলি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক, তবে মনে রাখতে হবে যে এগুলি বর্তমানে কেবল গবেষণাগারের পরিবেশেই পাওয়া গেছে। পরবর্তী পদক্ষেপগুলির মধ্যে রয়েছে বাস্তব ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তির পরীক্ষা করা। শুধুমাত্র ব্যাকটেরিয়া নয়, বরং জটিল দূষণযুক্ত প্রকৃত জলের মধ্যে এর দীর্ঘস্থায়ী কার্যকারিতা মূল্যায়ন করা হবে। এছাড়াও, বৃহৎ পরিসরে উৎপাদন এবং বাস্তবায়নের অর্থনৈতিক উপযোগিতা বিশ্লেষণ করাও জরুরি, যাতে এই প্রযুক্তি বিশ্বব্যাপী মানুষের কাছে সহজে পৌঁছানো সম্ভব হয়।