পৃথিবীর মেসোস্ফিয়ার অনুসন্ধানে নতুন সৌর-চালিত যন্ত্র

সম্পাদনা করেছেন: Vera Mo

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের প্রায় ৫০ থেকে ১০০ কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থিত মেসোস্ফিয়ার, এক রহস্যময় এবং অনেকাংশে অনাবিষ্কৃত স্তর। বিমান বা স্যাটেলাইটের মতো প্রচলিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই স্তরে পৌঁছানো কঠিন, যা একে 'ইগনোরোস্ফিয়ার' নামেও পরিচিতি দিয়েছে। তবে, সাম্প্রতিক গবেষণা এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যেখানে সৌর-চালিত অতি-হালকা যন্ত্র ব্যবহার করে এই দুর্গম অঞ্চলে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।

নেচার জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্রে, বিজ্ঞানীরা সিরামিক অ্যালুমিনা এবং ক্রোমিয়াম স্তর দিয়ে তৈরি এক ধরণের পাতলা কাঠামো উপস্থাপন করেছেন। এই যন্ত্রগুলি 'ফটোফোরেসিস' নামক একটি নীতির উপর ভিত্তি করে কাজ করে। যখন সূর্যের আলো এই কাঠামোর উপর পড়ে, তখন এর এক পাশ অন্য পাশের চেয়ে বেশি উত্তপ্ত হয়। এই তাপমাত্রার পার্থক্যের কারণে গ্যাস অণুগুলি উষ্ণতর পাশ থেকে বেশি শক্তি নিয়ে বিকিরিত হয়, যা একটি ধাক্কা তৈরি করে এবং যন্ত্রটিকে উপরের দিকে ঠেলে দেয়। এই প্রক্রিয়াটি বায়ুমণ্ডলের নিম্নচাপ অঞ্চলে অত্যন্ত কার্যকর, যা মেসোস্ফিয়ারের পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

এই প্রযুক্তি উচ্চ-উচ্চতার বায়ুমণ্ডলীয় অনুসন্ধানের জন্য নতুন সম্ভাবনা খুলে দিয়েছে। এই যন্ত্রগুলি বাতাসের গতি, চাপ এবং তাপমাত্রা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম, যা আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং জলবায়ু মডেলগুলির নির্ভুলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। পূর্বে এই তথ্যগুলি সংগ্রহ করা অত্যন্ত কঠিন ছিল, কারণ বিমান বা বেলুনগুলি এই উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে না এবং স্যাটেলাইটগুলিও এই স্তরের খুব কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে না।

এছাড়াও, এই ধরণের যন্ত্রগুলি টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে। এগুলি ভাসমান অ্যান্টেনা হিসাবে কাজ করতে পারে, যা পৃথিবীর পৃষ্ঠের কাছাকাছি থেকে ডেটা ট্রান্সমিশন সরবরাহ করতে সক্ষম, যা নিম্ন-কক্ষপথের স্যাটেলাইটগুলির তুলনায় কম লেটেন্সি (latency) প্রদান করবে। এই ভাসমান অ্যান্টেনা নেটওয়ার্কগুলি মহাকাশ-ভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি সাশ্রয়ী বিকল্প হতে পারে।

গবেষকরা দেখিয়েছেন যে, প্রায় ৩ সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের একটি যন্ত্র ১০ মিলিগ্রাম পেলোড বহন করতে সক্ষম, যা সেন্সর এবং যোগাযোগের জন্য যথেষ্ট। এমনকি ১০ সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের প্ল্যাটফর্মগুলি মেসোস্ফিয়ারে দীর্ঘ সময় ধরে ভেসে থাকতে পারে। এই প্রযুক্তিটি কেবল পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল অনুসন্ধানেই নয়, মঙ্গল গ্রহের মতো অন্যান্য গ্রহের বায়ুমণ্ডল অধ্যয়নেও ব্যবহার করা যেতে পারে, কারণ মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডলও পৃথিবীর মেসোস্ফিয়ারের অনুরূপ।

এই উদ্ভাবনী সৌর-চালিত যন্ত্রগুলি বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞান এবং যোগাযোগ প্রযুক্তিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।

উৎসসমূহ

  • Corriere Nazionale

  • Harvard John A. Paulson School of Engineering and Applied Sciences

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।