বিশ্ববিদ্যালয় অফ শিকাগো-র প্রিিটজকার স্কুল অফ মলিকুলার ইঞ্জিনিয়ারিং (PME)-এর গবেষকরা এক যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন করেছেন। তারা জীবন্ত কোষে প্রাপ্ত একটি প্রোটিনকে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং-এর মৌলিক একক কিউবিট-এ রূপান্তরিত করেছেন। এই উদ্ভাবনটি কোয়ান্টাম প্রযুক্তির জগতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যা জৈবিক সিস্টেমে কোয়ান্টাম সেন্সর ব্যবহারের পথ প্রশস্ত করবে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, এনহ্যান্সড ইয়েলো ফ্লুরোসেন্ট প্রোটিন (EYFP) নামক প্রোটিনটি স্বাভাবিক পরিবেশেও কোয়ান্টাম বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে। এর ফলে, কোয়ান্টাম সেন্সরগুলির জন্য অত্যাবশ্যকীয় অতি-নিম্ন তাপমাত্রার প্রয়োজনীয়তা দূর হয়েছে। এই EYFP প্রোটিনটিকে জীবন্ত কোষের মধ্যে স্থাপন করা সম্ভব, যেখানে এটি শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ও পরিবেশে তার কোয়ান্টাম বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে সক্ষম। এই আবিষ্কারটি জৈবিক সিস্টেমে কোয়ান্টাম সেন্সর তৈরির নতুন সম্ভাবনা খুলে দিয়েছে, যা রোগ নির্ণয় এবং জৈবিক প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে।
এই গবেষণাটি ২০২৫ সালের ২০শে আগস্ট নেচার জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এর প্রধান গবেষকদের মধ্যে রয়েছেন জ্যাকব এস. ফেডের, বেঞ্জামিন এস. সলোওয়ে, শ্রেয়া ভার্মা, জি. জি. গেং, শিহাও ওয়াং, বেথেল কিফল, এমেলিন জি. রিন্ডো, ইয়েঘিসে তসাতুরিয়ান, লিয়া আর. ওয়েইস, মৌজে জিয়ে, জুন হুয়াং, অ্যারন এসার-কান, লরা গ্যাগলিয়ার্ডি, ডেভিড ডি. আউশালোম এবং পিটার সি. মাউয়ের। ডেভিড আউশালোম, যিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের PME-তে অধ্যাপক এবং এই গবেষণার অন্যতম প্রধান গবেষক, তিনি বলেন, "আমরা এমন এক যুগে প্রবেশ করছি যেখানে কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা এবং জীববিদ্যার মধ্যেকার সীমারেখা ক্রমশ অস্পষ্ট হয়ে আসছে। এখানেই প্রকৃত রূপান্তরমূলক বিজ্ঞান ঘটবে।"
এই গবেষণাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন (NSF) এবং গর্ডন এবং বেটি মুর ফাউন্ডেশন দ্বারা অর্থায়নকৃত। এটি কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা এবং জীববিদ্যার সংযোগস্থলে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। EYFP-কে কোয়ান্টাম বিট হিসেবে ব্যবহার করার এই পদ্ধতিটি ভবিষ্যতে বায়োমেডিকেল অ্যাপ্লিকেশনগুলিতে কোয়ান্টাম সেন্সরগুলির ব্যবহারকে ত্বরান্বিত করবে। উদাহরণস্বরূপ, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে কোষের অভ্যন্তরে অত্যন্ত সূক্ষ্ম পরিবর্তনগুলি সনাক্ত করা সম্ভব হবে, যা রোগ সনাক্তকরণ এবং চিকিৎসার নতুন পথ খুলে দেবে।
পূর্বে, কোয়ান্টাম প্রযুক্তিগুলি সাধারণত অত্যন্ত শীতল এবং নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে কাজ করত। কিন্তু EYFP-এর মতো জৈবিক অণুকে কিউবিট হিসেবে ব্যবহার করার এই উদ্ভাবন প্রমাণ করে যে, জীবন্ত কোষের মতো উষ্ণ ও কোলাহলপূর্ণ পরিবেশেও কোয়ান্টাম বৈশিষ্ট্য বজায় রাখা সম্ভব। এটি কোয়ান্টাম সেন্সরগুলির নকশায় একটি নতুন ধারণা নিয়ে এসেছে, যেখানে প্রকৃতির নিজস্ব উপাদান ব্যবহার করে উন্নত প্রযুক্তির বিকাশ ঘটানো হচ্ছে। এই গবেষণাটি কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং জীববিজ্ঞানের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরি করেছে, যা ভবিষ্যতে আরও অনেক যুগান্তকারী আবিষ্কারের পথ খুলে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।