কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা প্রকৃতির সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াকে অনুকরণ করে এক যুগান্তকারী উদ্ভাবন করেছেন। তাঁরা সৌরশক্তি ব্যবহার করে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং জলকে ফরম্যাটে রূপান্তরিত করার জন্য একটি 'কৃত্রিম পাতা' তৈরি করেছেন, যা একটি পরিচ্ছন্ন জ্বালানি হিসেবে বিবেচিত। এই অত্যাধুনিক জৈব-সংকর (biohybrid) যন্ত্রটি আলোক-শোষক জৈব অর্ধপরিবাহী এবং ব্যাকটেরিয়াজনিত এনজাইমের এক সুসমন্বিত মিশ্রণ। এই সমন্বয়ের ফলে যন্ত্রটি কোনো প্রকার বিষাক্ত বা অস্থিতিশীল উপাদানের উপর নির্ভর না করেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে সক্ষম।
এই গবেষণাটি সরাসরি রাসায়নিক শিল্পের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে, যা বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণের প্রায় ৬ শতাংশের জন্য দায়ী। অধ্যাপক আরউইন রাইজনার, যিনি এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন, তিনি স্থায়িত্বের প্রেক্ষাপটে এই কাজের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। রাইজনার জোর দিয়ে বলেছেন যে একটি চক্রাকার, টেকসই অর্থনীতি গড়ে তোলার জন্য রাসায়নিক শিল্পকে 'জীবাশ্ম-মুক্ত' করা অপরিহার্য, কারণ এই খাতটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় অসংখ্য পণ্য উৎপাদন করে। পরীক্ষাগারের পরীক্ষায়, এই যন্ত্রটি দক্ষতার সাথে CO₂ কে ফরম্যাটে রূপান্তরিত করার ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে। উৎপাদিত ফরম্যাটটি এরপর একটি 'ডমিনো' বিক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়, যার মাধ্যমে উচ্চ ফলন ও বিশুদ্ধতার সাথে একটি মূল্যবান ফার্মাসিউটিক্যাল যৌগ সংশ্লেষিত হয়।
এই প্রযুক্তির একটি বিশেষ দিক হলো, পূর্ববর্তী নকশাগুলিতে প্রায়শই সীসার মতো বিষাক্ত উপাদান ব্যবহার করা হতো, কিন্তু এই নতুন জৈব-সংকর মডেলটি অ-বিষাক্ত উপকরণ ব্যবহার করে, যা এটিকে আরও নিরাপদ করে তুলেছে। অধ্যাপক রাইজনারের দল সৌর রসায়নের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। তাদের এই উদ্ভাবনটি জৈব অর্ধপরিবাহীগুলিকে এই ধরনের জৈব-সংকর যন্ত্রে আলোক-সংগ্রহকারী উপাদান হিসাবে ব্যবহারের প্রথম সফল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই সাফল্য টেকসই জ্বালানি উৎপাদন এবং রাসায়নিক উৎপাদনে নির্গমন হ্রাসের দিকে একটি বড় পদক্ষেপের ইঙ্গিত দেয়।
এই গবেষণার জন্য অর্থায়ন ও সহায়তা প্রদান করেছে A*STAR, ইউরোপীয় গবেষণা পরিষদ (European Research Council), এবং ইউকে রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন (UK Research and Innovation)-এর মতো একাধিক সংস্থা। এই অগ্রগতি ইঙ্গিত দেয় যে, প্রকৃতির প্রক্রিয়াকে অনুকরণ করে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদনের পদ্ধতিকে আরও দায়িত্বশীল ও পরিবেশ-বান্ধব পথে চালিত করার সক্ষমতা অর্জন করছি, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি স্পষ্ট সুযোগ উন্মোচন করে।
