নাসা মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন মাইলফলক অর্জন করেছে, যেখানে আমাদের সৌরজগতের বাইরে ৬,০০০-এরও বেশি এক্সোপ্ল্যানেট বা বহির্গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে। কেপলার, টেস (TESS) এবং জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মতো মিশনের নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই যুগান্তকারী অর্জন সম্ভব হয়েছে। নাসার এক্সোপ্ল্যানেট সায়েন্স ইনস্টিটিউট (NExScI), যা ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে (Caltech) অবস্থিত, এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। বর্তমানে প্রায় ৮,০০০-এর বেশি গ্রহ প্রার্থী নিশ্চিতকরণের অপেক্ষায় রয়েছে এবং এই সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে।
নাসার অ্যাস্ট্রোফিজিক্স ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক শন ডোমগাল-গোল্ডম্যান বলেছেন, “এই মাইলফলকটি মহাজাগতিক অনুসন্ধানের কয়েক দশকের প্রতিফলন, যা মানবজাতির রাতের আকাশের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “ধাপে ধাপে, আবিষ্কার থেকে শুরু করে বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ পর্যন্ত, নাসার মিশনগুলি একটি মৌলিক প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ভিত্তি তৈরি করেছে: আমরা কি একা?”
এই এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কারগুলি মহাবিশ্বে প্রাণের সন্ধান এবং আমাদের সৌরজগতের বাইরের গ্রহীয় ব্যবস্থাগুলির গঠন ও বিবর্তন সম্পর্কে গভীরতর ধারণা লাভের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, আমাদের ছায়াপথেই বিলিয়ন বিলিয়ন গ্রহ বিদ্যমান, যা এখনও অনাবিষ্কৃত। নতুন প্রযুক্তি এবং আসন্ন মিশনগুলি এই অনুসন্ধানকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
এই গ্রহগুলির মধ্যে কিছু পৃথিবী-সদৃশ এবং বাসযোগ্য অঞ্চলে (habitable zone) অবস্থিত, যেখানে তরল জল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, যা জীবনের জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ইতিমধ্যেই শতাধিক এক্সোপ্ল্যানেটের বায়ুমণ্ডল বিশ্লেষণ করেছে। তবে, পৃথিবী-আকারের গ্রহগুলির বায়ুমণ্ডল অধ্যয়ন করার জন্য নতুন প্রযুক্তির প্রয়োজন হবে। নাসার আসন্ন ন্যান্সি গ্রেস রোমান স্পেস টেলিস্কোপ এবং হ্যাবিটেবল ওয়ার্ল্ডস অবজারভেটরি-র মতো মিশনগুলি এই অনুসন্ধানে আরও সাহায্য করবে।
এই আবিষ্কারগুলি কেবল মহাকাশের বিশালতাকে আমাদের সামনে তুলে ধরছে না, বরং আমাদের নিজেদের অস্তিত্ব এবং মহাবিশ্বে আমাদের স্থান সম্পর্কেও নতুন করে ভাবতে শেখাচ্ছে। এই জ্ঞান আমাদের আরও উন্নত প্রযুক্তির বিকাশে এবং মহাবিশ্বের গভীর রহস্য উন্মোচনে অনুপ্রাণিত করবে।