জুলাই ২০২৫-এ, জ্যোতির্পদার্থবিদদের একটি দল পৃথিবীর নিকটতম ব্ল্যাক হোল অধ্যয়নের জন্য একটি উচ্চাভিলাষী আন্তঃগ্রহ মিশনের পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে। এই মিশনের মূল উদ্দেশ্য হলো চরম পরিস্থিতিতে সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের সত্যতা যাচাই করা, যা পৃথিবী থেকে ২০-২৫ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত একটি ব্ল্যাক হোলকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হবে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, একটি ক্ষুদ্র মহাকাশ প্রোব তৈরি করা হবে যা পৃথিবী থেকে লেজার রশ্মির সাহায্যে আলোর গতির ৩০% পর্যন্ত গতি অর্জন করতে সক্ষম হবে। এই প্রযুক্তিগত ক্ষমতা প্রোবটিকে ৬০-৭৫ বছরের মধ্যে নিকটতম ব্ল্যাক হোলে পৌঁছাতে সাহায্য করবে। তবে, সেখান থেকে পৃথিবীতে তথ্য প্রেরণ করতে আরও ২০-২৫ বছর সময় লাগবে, যার ফলে মিশনের মোট সময়কাল প্রায় ১০০ বছর হতে পারে। বর্তমানে, এই ধরনের মিশনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগুলি বিকাশের পর্যায়ে রয়েছে।
প্রকল্পটির আনুমানিক ব্যয় ১ ট্রিলিয়ন ডলার, তবে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সাথে সাথে আগামী ২০-৩০ বছরের মধ্যে এই ব্যয় প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসতে পারে। এই মিশনের সফল বাস্তবায়ন ব্ল্যাক হোলকে কাছ থেকে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করার প্রথম সুযোগ করে দেবে। এটি পদার্থবিদ্যায় নতুন আবিষ্কারের পথ খুলে দিতে পারে এবং চরম পরিস্থিতিতে সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বকে নিশ্চিত বা অস্বীকার করতে পারে। বর্তমানে, এই মিশনটি ধারণাগত পরিকল্পনা পর্যায়ে রয়েছে। প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং প্রকল্পের ব্যয় এর ভবিষ্যৎ বাস্তবায়নের মূল নির্ধারক। এই ধরনের একটি মিশনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির উন্নয়ন আগামী ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে সম্ভব হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কসমোলজিস্ট কসমো বাম্বি-র মতে, এই ধরনের একটি আন্তঃগ্রহ অভিযান, যদিও এটি অত্যন্ত অনুমানমূলক এবং চ্যালেঞ্জিং, তবে এটি সম্পূর্ণ অবাস্তব নয়। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, যদি পৃথিবী থেকে ২০-২৫ আলোকবর্ষের মধ্যে একটি ব্ল্যাক হোল খুঁজে পাওয়া যায়, তবে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি তৈরি করা কেবল সময়ের ব্যাপার। এই মিশনের মাধ্যমে আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বকে চরম পরিস্থিতিতে পরীক্ষা করার সুযোগ পাওয়া যাবে, যা মহাবিশ্বের গভীরতম রহস্য উন্মোচনে সহায়ক হতে পারে। এই মিশনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির মধ্যে রয়েছে ন্যানোক্রাফট (gram-scale probes) এবং লাইট সেইল (light sail), যা পৃথিবী-ভিত্তিক লেজার দ্বারা চালিত হবে। এই প্রযুক্তিগুলি ব্রেকথ্রু স্টারশট (Breakthrough Starshot) উদ্যোগের মতো প্রকল্পগুলিতেও ব্যবহৃত হচ্ছে, যার লক্ষ্য আলফা সেন্টোরি (Alpha Centauri) নক্ষত্রমণ্ডলে ন্যানোক্রাফট পাঠানো। এই মিশনটি মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে পারে, যা আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে ধারণাকে আরও প্রসারিত করবে।