মহাকাশচারীরা মহাজাগতিক অশ্বখুরাকৃতি ছায়াপথ (Cosmic Horseshoe galaxy) নামক স্থানে একটি কৃষ্ণগহ্বর (black hole) আবিষ্কার করেছেন, যার ভর সূর্যের ভরের ৩৬ বিলিয়ন গুণ। এটি আমাদের ছায়াপথের কেন্দ্রের কৃষ্ণগহ্বরের চেয়ে প্রায় ১০,০০০ গুণ বেশি ভারী। এই আবিষ্কারটি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মহাবিশ্বের বিশালতার ধারণা এবং কৃষ্ণগহ্বরের সম্ভাবনার বিষয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। এই বিশাল কৃষ্ণগহ্বরটি প্রায় ৫ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।
এর ভর নির্ণয়ের জন্য বিজ্ঞানীরা মহাকর্ষীয় লেন্সিং (gravitational lensing) এবং ছায়াপথের অভ্যন্তরে নক্ষত্রের গতিবিধি (stellar motion) পর্যবেক্ষণ করেছেন। মহাকর্ষীয় লেন্সিং হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে একটি বিশাল বস্তু, যেমন একটি কৃষ্ণগহ্বর বা ছায়াপথ, তার মহাকর্ষ বলের প্রভাবে আলোকরশ্মিকে বাঁকিয়ে দেয়। এই বাঁকানো আলোর ফলেই দূরবর্তী বস্তুর একটি প্রতিবিম্ব তৈরি হয়, যা এক্ষেত্রে অশ্বখুরাকৃতির বলয় (Einstein ring) হিসেবে দেখা গেছে। এই আবিষ্কারটি অতিবিশাল কৃষ্ণগহ্বর এবং তাদের আশ্রয়দাতা ছায়াপথের মধ্যেকার সম্পর্ক সম্পর্কে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, কৃষ্ণগহ্বর এবং ছায়াপথের বৃদ্ধি একে অপরের সাথে জড়িত। যখন একটি ছায়াপথ বড় হয়, তখন এটি তার কেন্দ্রের দিকে পদার্থ আকর্ষণ করে, যা কৃষ্ণগহ্বরের বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়। এই নতুন পদ্ধতিটি, যা মহাকর্ষীয় লেন্সিং এবং নাক্ষত্রিক গতিবিদ্যার সমন্বয়ে গঠিত, জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের দূরবর্তী মহাবিশ্বের সুপ্ত বা নিষ্ক্রিয় কৃষ্ণগহ্বরগুলিকেও সনাক্ত করতে এবং তাদের ভর পরিমাপ করতে সাহায্য করবে, এমনকি যখন তারা কোনো বিকিরণ নিঃসরণ করে না তখনও। গবেষণাটি, যার নেতৃত্বে ছিলেন ব্রাজিলের Universidade Federal do Rio Grande do Sul-এর পিএইচডি প্রার্থী কার্লোস মেলো, আগস্ট ২০২৫-এ 'মান্থলি নোটিসেস অফ দ্য রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি' (Monthly Notices of the Royal Astronomical Society) জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এই আবিষ্কারটি মহাবিশ্বের গঠন এবং বিবর্তন সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে আরও প্রসারিত করবে, বিশেষ করে কৃষ্ণগহ্বরগুলির বৃদ্ধি এবং তাদের হোস্ট গ্যালাক্সির সাথে তাদের আন্তঃসম্পর্ক বোঝার ক্ষেত্রে।