জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ১৮ আলোকবর্ষ দূরে বসবাসযোগ্য অঞ্চলে 'সুপার-আর্থ' GJ 251 c আবিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন

সম্পাদনা করেছেন: Uliana S.

আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞানী দল সম্প্রতি GJ 251 c নামে একটি নতুন বহির্গ্রহ (এক্সোপ্ল্যানেট) শনাক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে। সৌরজগতের বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে এমন জগতের সন্ধানে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। এই গ্রহটি পৃথিবী থেকে প্রায় ১৮ আলোকবর্ষ দূরত্বে অবস্থিত, যা এটিকে এই ধরনের নিকটতম মহাজাগতিক প্রতিবেশীদের মধ্যে অন্যতম করে তুলেছে।

GJ 251 c গ্রহটিকে 'সুপার-আর্থ' হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে, কারণ এর ভর পৃথিবীর ভরের প্রায় চার গুণ। প্রাথমিক অনুমান অনুসারে, এর গঠন পাথুরে। এই জগৎটির শনাক্তকরণের কাজটি সম্ভব হয়েছে অত্যন্ত নির্ভুল হ্যাবিটেবল-জোন প্ল্যানেট ফাইন্ডার (HPF) স্পেকট্রোগ্রাফ ব্যবহার করে। টেক্সাসের ম্যাকডোনাল্ড অবজারভেটরিতে অবস্থিত হবি-এবারলি টেলিস্কোপে এই যন্ত্রটি স্থাপন করা হয়েছে। HPF-এর মূল কাজ হলো নিকটবর্তী নক্ষত্রগুলি থেকে আসা ইনফ্রারেড সংকেতগুলি পরিমাপ করা, যাতে বসবাসযোগ্য অঞ্চলে পৃথিবীর মতো গ্রহগুলি খুঁজে পাওয়া যায়। এটি ডপলার প্রভাবের নীতিতে কাজ করে—গ্রহের ঘূর্ণনের কারণে সৃষ্ট মহাকর্ষীয় প্রভাবের ফলে নক্ষত্রের বর্ণালী রেখার সামান্য স্থানচ্যুতি পরিমাপ করে।

এই এক্সোপ্ল্যানেটটি GJ 251 নামক একটি লোহিত বামন নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে, যা আকাশগঙ্গা ছায়াপথে সবচেয়ে সাধারণ ধরনের নক্ষত্র। GJ 251 (যার ভর প্রায় ০.৩৬ সৌর ভর) এর মতো লোহিত বামন নক্ষত্রগুলি তাদের পরিবর্তনশীল কার্যকলাপের জন্য পরিচিত। এদের থেকে নির্গত সৌর শিখা (flares) গ্রহের বায়ুমণ্ডলের জন্য হুমকি হতে পারে। তা সত্ত্বেও, GJ 251 c-এর নৈকট্য (১৮.২ আলোকবর্ষ) এটিকে ভবিষ্যৎ গবেষণার জন্য একটি আদর্শ লক্ষ্যবস্তু করে তুলেছে। থার্টি মিটার টেলিস্কোপ (TMT)-এর মতো পরবর্তী প্রজন্মের টেলিস্কোপ ব্যবহার করে সরাসরি পর্যবেক্ষণের জন্য এটি খুবই উপযোগী। ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন এবং নাসা/এনএসএফ-এর বিভিন্ন কর্মসূচির সহায়তাপ্রাপ্ত বিজ্ঞানীরা এই আবিষ্কারকে বহির্গ্রহ ব্যবস্থা সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়াকে গভীর করার জন্য একটি অনুঘটক হিসেবে দেখছেন।

GJ 251 c-এর অবস্থান বসবাসযোগ্য অঞ্চলে হওয়ায়, যেখানে তাত্ত্বিকভাবে তরল জলের অস্তিত্ব থাকতে পারে, এটি জৈব-স্বাক্ষর (biosignatures) অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে অগ্রভাগে রয়েছে। গবেষকরা উল্লেখ করেছেন যে লোহিত বামন নক্ষত্রগুলি কিছু জটিলতা তৈরি করতে পারে: তাদের প্রাথমিক তীব্র বিকিরণ গ্রহের বায়ুমণ্ডল বাষ্পীভূত করে দিতে পারত, যদিও সময়ের সাথে সাথে বায়ুমণ্ডল পুনরুদ্ধার হওয়া সম্ভব। এছাড়াও, এই ধরনের নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণকারী গ্রহগুলি প্রায়শই জোয়ারের টানে আবদ্ধ (tidally locked) থাকে, যার ফলে গ্রহের একপাশে চরম উষ্ণতা এবং অন্যপাশে চরম শীতলতা বিরাজ করে। এই আবিষ্কারটি প্রমাণ করে যে জটিল নাক্ষত্রিক পরিবেশেও অনন্য ধরনের প্রাণের উদ্ভব হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা মহাকাশ গবেষণার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।

উৎসসমূহ

  • La Repubblica.it

  • UC Irvine astronomers discover nearby exoplanet in habitable zone

  • Newly discovered 'super-Earth' offers prime target in search for alien life

  • Newly discovered ‘super-Earth’ offers prime target in search for alien life

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।