মহাকাশ গবেষণায় জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (JWST) এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। সম্প্রতি, এটি এম৮৭ গ্যালাক্সির সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল M87*-এর জেটের সবচেয়ে স্পষ্ট ছবি ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে। এই যুগান্তকারী চিত্রটি প্রমাণ করে যে, এম৮৭ গ্যালাক্সির কেন্দ্র থেকে প্রায় আলোর গতির সমান বেগে পদার্থ নির্গত হচ্ছে।
গবেষকদের একটি দল JWST-এর নিয়ার-ইনফ্রারেড ক্যামেরা (NIRCam) ব্যবহার করে চারটি ভিন্ন আলোক ব্যান্ডে এই ছবিটি তুলেছে। উন্নত ফিল্টারিং কৌশল ব্যবহার করে নক্ষত্রের আলো এবং গ্যালাকটিক হ্যালোকে বাদ দিয়ে তারা এই বিশাল ব্ল্যাক হোলের জেটের একটি পরিষ্কার এবং বিশদ চিত্র পেতে সক্ষম হয়েছে। পৃথিবী থেকে প্রায় ৫.৫ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এই ঘটনা দিগন্তটি আমাদের জানা অন্যতম শক্তিশালী এবং শক্তিপূর্ণ ব্ল্যাক হোল, যা জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে সর্বদা একটি প্রধান লক্ষ্যবস্তু।
এম৮৭* নামক এই কেন্দ্রীয় ব্ল্যাক হোলটি প্রথমবার ২০১৯ সালে ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ (EHT) কোলাবোরেশনের প্রচেষ্টায় এর ঘটনা দিগন্তের ছবি তুলে চিত্রিত হয়েছিল, যা মহাকাশ গবেষণায় একটি মাইলফলক ছিল। বিদ্যমান চিত্রগুলো সত্ত্বেও, এই গ্যালাকটিক জেট সম্পর্কে কৌতূহল রয়ে গেছে। JWST দ্বারা সম্প্রতি প্রকাশিত এই ছবিটি সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে এবং গ্যালাকটিক জেটের রহস্য উন্মোচন করতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই আবিষ্কারগুলো পর্যবেক্ষণমূলক জ্যোতির্বিদ্যার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এবং উচ্চ-রেজোলিউশনের ছবি তোলার ক্ষেত্রে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের ক্ষমতা তুলে ধরে।
গবেষকরা দেখেছেন যে, এম৮৭ গ্যালাক্সির জেটটি প্রায় ৫,০০০ আলোকবর্ষ দীর্ঘ এবং এটি প্রায় আলোর গতির সমান বেগে প্লাজমা নির্গত করে। মেসিয়ার ৮৭ (M87) গ্যালাক্সির সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল প্রতি সেকেন্ডে আলোর গতির ৯৯%-এর বেশি বেগে কণা নির্গত করছে। এই নির্গত পদার্থের মধ্যে কিছু অংশ প্রায় ৬,০০০ আলোকবর্ষ দূরে একটি ক্ষীণ প্রতি-জেট (counter-jet) তৈরি করে, যা JWST-এর তীক্ষ্ণ দৃষ্টির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো স্পষ্টভাবে দেখা গেছে। এই জেটটি একটি উজ্জ্বল গোলাপী ফিতার মতো দেখাচ্ছে, যেখানে কণাগুলো দ্রুত গতিতে ছুটছে।
এই নতুন চিত্রগুলো জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ব্ল্যাক হোল থেকে নির্গত শক্তিশালী জেটগুলো কীভাবে কাজ করে এবং কীভাবে তারা পার্শ্ববর্তী গ্যালাক্সিগুলোকে প্রভাবিত করে, সে সম্পর্কে আরও জানতে সাহায্য করবে। এই গবেষণাটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নতুন তথ্য সরবরাহ করবে এবং ভবিষ্যতের মহাকাশ পর্যবেক্ষণের জন্য একটি মানদণ্ড স্থাপন করবে।