ভারতের রাজধানী দিল্লি বর্তমানে ভয়াবহ শীতকালীন ধোঁয়াশার সম্মুখীন, যা জনস্বাস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলছে। এই সংকট মোকাবিলায় দিল্লি সরকার বৈজ্ঞানিক পদক্ষেপ হিসেবে ক্লাউড সিডিং বা কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানোর পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করেছে। এই উদ্যোগটি দিল্লি সরকার এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (আইআইটি) কানপুরের যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে, এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের দ্বিতীয় পরীক্ষামূলক কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম ধাপের পরীক্ষার পর, দ্বিতীয় এই পরীক্ষাটি উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিল্লির নির্দিষ্ট অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত ছিল। আইআইটি কানপুরের বিজ্ঞানীরা এই প্রক্রিয়ার প্রযুক্তিগত দিকটি পরিচালনা করছেন, যাদের মহারাষ্ট্র এবং উত্তর প্রদেশে পূর্বে সফলভাবে ক্লাউড সিডিং পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এই বৈজ্ঞানিক হস্তক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো মেঘের মধ্যে সিলভার আয়োডাইড বা ভোজ্য লবণের মতো রাসায়নিক কণা ছড়িয়ে কৃত্রিমভাবে বৃষ্টিপাত ঘটানো, যা বায়ুমণ্ডলের দূষণকারী কণাগুলিকে ধুয়ে ফেলতে সাহায্য করবে।
পরিবেশমন্ত্রী মনজিন্দর সিং সিরসা জানিয়েছেন যে দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় আটটি ফ্লেয়ার ব্যবহার করা হয়েছিল এবং প্রক্রিয়াটি প্রায় আধ ঘণ্টা স্থায়ী হয়েছিল। প্রতিটি বিমান চালনার মাধ্যমে প্রায় ১০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে লক্ষ্যবস্তু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই ধরনের সংবেদনশীল অপারেশনের জন্য ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন (DGCA) থেকে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র প্রাপ্ত হয়েছে, যা নিশ্চিত করে যে সমস্ত নিরাপত্তা বিধি কঠোরভাবে মেনে চলা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্লাউড সিডিং একটি অস্থায়ী নিরাময় মাত্র, যা ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানো, যানবাহনের ধোঁয়া এবং শিল্প নির্গমনের মতো উৎস-ভিত্তিক দূষণ নিয়ন্ত্রণের বিকল্প হতে পারে না। তবে, যখন বাতাসের গুণমান সূচক (AQI) বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছায়, তখন এটি দ্রুত প্রতিক্রিয়ার একটি জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করতে পারে। শিকাগোর এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই দূষিত বাতাস নাগরিকদের গড় আয়ু প্রায় ১১.৯ বছর কমিয়ে দিচ্ছে।
যদি এই প্রাথমিক পরীক্ষাগুলি ইতিবাচক ফল দেয়, তবে নভেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসের তীব্র দূষণকালে নিয়মিতভাবে এই ধরনের অভিযান চালানোর সম্ভাবনা তৈরি হবে। এই প্রচেষ্টা বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে অন্যান্য দূষণ-কবলিত শহরগুলির জন্যও একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে, যেখানে বিজ্ঞান পরিবেশগত স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য একটি শক্তিশালী সহযোগী হিসেবে কাজ করবে।
