গতকাল রাতে একটানা বৃষ্টির পর আজ সকালে চট্টগ্রাম শহর জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এই জলমগ্নতার ফলে হাজার হাজার মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়েছে। শহরের নিচু এলাকাগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে এবং বিভিন্ন স্থানে কোমর সমান পানি দেখা গেছে। এই প্রবল বর্ষণের একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ছিল আজ ভোরে অক্সিজেন-বায়োজিদ সড়কের শীতল ঝর্ণা খালের উপর নির্মিত প্রায় ৪৫ বছর পুরোনো একটি সেতুর আংশিক ধস। সাম্প্রতিক খাল সম্প্রসারণ কাজের ফলে সৃষ্ট ভূমি ক্ষয় সেতুর কাঠামোকে দুর্বল করে দিয়েছিল, যার ফলে এটি আংশিকভাবে ভেঙে পড়েছে। এই ঘটনাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের উপর তীব্র যানজট সৃষ্টি করেছে।
আંબાগান আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৮১ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে আগামী কাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে বৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। কর্তৃপক্ষ পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের ঝুঁকি বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। বাসিন্দাদের মতে, জলাবদ্ধতার প্রধান কারণগুলো হলো নর্দমাগুলো বন্ধ থাকা এবং খালগুলোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাব। এটি চলমান অবকাঠামো প্রকল্পগুলির কার্যকারিতা এবং এই সমস্যা সমাধানের জন্য বরাদ্দকৃত বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
চট্টগ্রামের জলমগ্নতার মূল কারণগুলির মধ্যে একটি হলো অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং প্রাকৃতিক জল নিষ্কাশন ব্যবস্থার উপর এর প্রভাব। বিগত কয়েক দশকে, শহরটিতে অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটা এবং খাল ভরাট করার ফলে জলাবদ্ধতার সমস্যা আরও তীব্র হয়েছে। ১৯৯৫ সালের একটি ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান থাকা সত্ত্বেও, নতুন প্রকল্পগুলি প্রায়শই এই মাস্টার প্ল্যানকে উপেক্ষা করে তৈরি করা হয়েছে, যা মূলত প্রধান খালগুলির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে কিন্তু অভ্যন্তরীণ ছোট ড্রেনগুলির সংস্কারে অবহেলা করে। এর ফলে বৃষ্টির পানি প্রধান খালগুলিতে পৌঁছাতে পারছে না, যা জলাবদ্ধতার কারণ হচ্ছে। এছাড়াও, অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে সবুজ এলাকা কমে গেছে এবং কংক্রিটের আচ্ছাদন বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বৃষ্টির পানি শোষণ করার ক্ষমতা হ্রাস করেছে। এই পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদী জলাবদ্ধতার একটি প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
চট্টগ্রামে জলমগ্নতা নিরসনের জন্য গত দশ বছরে প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে, যার মধ্যে জলাবদ্ধতা মোকাবেলার জন্য চারটি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত ছিল, যার মোট ব্যয় ছিল ১৪,২৬৩ কোটি টাকা। তা সত্ত্বেও, সমস্যাটি রয়ে গেছে এবং কিছু ক্ষেত্রে আরও খারাপ হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব, সমন্বয়হীনতা, নগর পরিকল্পনার অভাব এবং জনসাধারণের উদাসীনতা এই সমস্যাটিকে শহরবাসীর জন্য একটি স্থায়ী দুঃস্বপ্নে পরিণত করেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সমন্বিত পরিকল্পনা এবং কার্যকর বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি।