বিশ্বজুড়ে কৃষিখাত বর্তমানে অপ্রত্যাশিত আবহাওয়ার চরম রূপের কারণে গুরুতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। ভারী বৃষ্টিপাত এবং তীব্র গরমের মতো আবহাওয়ার অস্বাভাবিক পরিবর্তনগুলি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি এবং ফলন হ্রাসের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাপী কৃষকরা তাদের উৎপাদন স্থিতিশীল রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন, কারণ চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলি ফসলের স্বাভাবিক বৃদ্ধিকে ব্যাহত করছে। দীর্ঘস্থায়ী বৃষ্টিতে শিকড় পচে যাওয়া বা প্রখর রোদে পাতা শুকিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাগুলি কৃষকদের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হচ্ছে।
এই পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা এবং অর্থনীতির উপর গভীর প্রভাব ফেলছে। কৃষকদের এই সংকট মোকাবেলার জন্য বিভিন্ন অভিযোজন কৌশল অবলম্বন করতে হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের ফসল চাষ এবং পশুসম্পদ পালন, যা ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও, জিপিএস-গাইডেড ট্রাক্টর এবং ড্রোনের মতো নির্ভুল কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে জল ও সারের মতো সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা হচ্ছে। টেকসই কৃষি পদ্ধতি, যেমন সংরক্ষণমূলক চাষাবাদ, শস্য পর্যায়ক্রম এবং আচ্ছাদন ফসল মাটির স্বাস্থ্য উন্নত করতে এবং জল ব্যবহার কমাতে সহায়তা করছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। একটি সমীক্ষা অনুসারে, প্রতি অতিরিক্ত ডিগ্রি সেলসিয়াস বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীর খাদ্য উৎপাদনের ক্ষমতা প্রতি ব্যক্তি প্রতিদিন ১২০ ক্যালোরি কমে যাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এই পরিবর্তনগুলি খাদ্য সরবরাহকে ব্যাহত করছে এবং দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা ভোক্তাদের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। কৃষি সম্প্রদায়গুলির উপর এই পরিস্থিতির ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে, কারণ তাদের উৎপাদন খরচ বাড়ছে এবং ফলন কমছে।
দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিকোণ থেকে, খাদ্য নিরাপত্তায় জলবায়ু অস্থিরতার প্রভাব কমাতে অভিযোজন কৌশলগুলির প্রয়োজনীয়তা অব্যাহত থাকবে। চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলি, যেমন খরা, বন্যা এবং ঝড়, বিশ্বজুড়ে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং অপুষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ। এই ঘটনাগুলির পুনরাবৃত্তি এবং তীব্রতা জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলার জন্য জলবায়ু-সংবেদনশীল কৃষি, উন্নত জল ব্যবস্থাপনা এবং খরা ও বন্যা-প্রতিরোধী বীজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।