গত সপ্তাহান্তে মধ্য ভিয়েতনামে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাতের ফলে এক ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যা অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং পরিবেশের সাথে মানুষের মিথস্ক্রিয়ার এক নতুন সন্ধিক্ষণের ইঙ্গিত বহন করে। গত অক্টোবর মাসের ২৭ তারিখে, হুয়ে শহরে মাত্র এক দিনের মধ্যে অবিশ্বাস্য ১,৭০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত নথিভুক্ত হয়, যা দেশের ইতিহাসে বৃষ্টিপাতের তীব্রতার এক নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে। এই বিপুল জলরাশি চার থেকে পাঁচটি কেন্দ্রীয় প্রদেশ জুড়ে বিস্তৃত এলাকা প্লাবিত করেছে, যার ফলে কমপক্ষে দশজনের প্রাণহানি ঘটেছে এবং বিপুল সংখ্যক মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে হয়েছে। বর্তমান তথ্যানুসারে, এই সপ্তাহে বন্যায় কমপক্ষে ১০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে এবং আট জন নিখোঁজ রয়েছেন।
এই বিপর্যয় যোগাযোগ ব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে। দেশের উত্তরাঞ্চলের রাজধানী হ্যানয় থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বাণিজ্যিক কেন্দ্র হো চি মিন সিটির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ রেল পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে। প্রায় ২,০০,০০০ পরিবার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নতার সম্মুখীন হয়েছে। কৃষিখাতেও বড় ধরনের আঘাত হেনেছে, যেখানে প্রায় ২,২০০ হেক্টর ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্যোগ কবলিত এলাকায় সামরিক বাহিনী সক্রিয় হয়েছে এবং অনুসন্ধান, উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যে ১,৬০,০০০ এরও বেশি সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে, যা সংকটের সময়ে ঐক্যবদ্ধ শক্তির প্রতিফলন ঘটিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা এই চরম আবহাওয়ার ক্রমবর্ধমান তীব্রতাকে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের বৃহত্তর কাঠামোর সাথে যুক্ত করেছেন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভিয়েতনামে জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ঝড়-বৃষ্টির মৌসুম চলে, এবং এই বছর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় বা ঝড় আঘাত হেনেছে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন যে উষ্ণ বায়ুমণ্ডল আরও বেশি আর্দ্রতা ধারণ করায় আকস্মিক বন্যা এবং ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়ছে, বিশেষত ঘনবসতিপূর্ণ শহরাঞ্চলে।
পর্যটন কেন্দ্র হোই আন এবং হুয়েতে প্রবল বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। থু বন নদীর পানি ১৯৬৪ সালের রেকর্ড ছাড়িয়ে ৫.৬২ মিটারে পৌঁছেছিল, যা অবকাঠামোগত দুর্বলতাগুলিকে সামনে এনেছে। কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছে যে প্রতিকূল আবহাওয়া অব্যাহত থাকতে পারে; বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ৩০, ২০২৫ পর্যন্ত আরও ৬০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে, কেবল ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করাই যথেষ্ট নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করা অপরিহার্য, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের সচেতনতা ও সহযোগিতামূলক মনোভাব দ্রুত পুনরুদ্ধারের মূল চাবিকাঠি হবে।
