গত ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সালের রাতে দিল্লি-এনসিআর এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের আকাশ এক অসাধারণ মহাজাগতিক দৃশ্যে আলোকিত হয়েছিল। প্রায় রাত ১:২০ মিনিটে, একটি অত্যন্ত উজ্জ্বল বস্তু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে এবং দ্রুত ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়, যা বহু বাসিন্দার কাছে এক বিস্ময়কর আলোর ঝলকানি সৃষ্টি করে। এই ঘটনাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে অনেকে এটিকে 'উল্কাপিণ্ডের বিস্ফোরণ' বলে অভিহিত করেছেন এবং এর উজ্জ্বলতার প্রশংসা করেছেন।
প্রাথমিকভাবে, এই ঘটনাটিকে একটি প্রাকৃতিক মহাজাগতিক ঘটনা, যেমন একটি উল্কাপিণ্ড বা ফায়ারবল বলে মনে করা হয়েছিল। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে, একটি বোলিড হলো একটি অত্যন্ত উজ্জ্বল উল্কাপিণ্ড যা বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় ভেঙে যায়। এই ধরনের ঘটনায় মহাকাশের বড় শিলাখণ্ড বায়ুমণ্ডলের ঘর্ষণে জ্বলে ওঠে এবং উজ্জ্বল আলোর সৃষ্টি করে। আমেরিকান মেটিওর সোসাইটি অনুসারে, সেপ্টেম্বর মাসটি ছোট উল্কাপিণ্ড বর্ষের জন্য সক্রিয় থাকে, তবে এই ধরনের বিচ্ছিন্ন উজ্জ্বল উল্কাপিণ্ডগুলিও এই সময়ের বাইরে দেখা যেতে পারে।
তবে, পরবর্তীকালে প্রাপ্ত তথ্য এবং ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন যে, এই ঘটনাটি আসলে একটি প্রাকৃতিক উল্কাপিণ্ড ছিল না, বরং এটি ছিল একটি চীনা রকেট উৎক্ষেপণের মহাকাশ বর্জ্য। বিশেষ করে, চীনের লং মার্চ ৩বি রকেটের একটি অংশ, যা ১৯শে সেপ্টেম্বর পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুনরায় প্রবেশের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল, তার সাথে এই ঘটনার সময় মিলে যাচ্ছে। মহাকাশ বর্জ্যের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় এই ধরনের উজ্জ্বল আলোর ঝলকানি এবং খণ্ড খণ্ড হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়।
এই ঘটনাটি দিল্লি, নয়ডা, গাজিয়াবাদ, গুরুগ্রাম এবং এমনকি আলিगढ़ পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে দেখা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন যে, আলোর ঝলকানি কয়েক সেকেন্ডের জন্য স্থায়ী ছিল কিন্তু এটি এতটাই উজ্জ্বল ছিল যে তা শহরের আলোকেও ম্লান করে দিয়েছিল। কিছু লোক একটি ক্ষীণ গুঞ্জন শব্দ শোনার কথাও জানিয়েছেন, যদিও এর কোনো আনুষ্ঠানিক নিশ্চিতকরণ পাওয়া যায়নি।
এই ঘটনাটি মহাকাশ বর্জ্যের ক্রমবর্ধমান সমস্যা এবং পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে এর পুনঃপ্রবেশের ঝুঁকি সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুস্মারক। যদিও প্রাকৃতিক উল্কাপিণ্ডগুলি মহাকাশের বিস্ময়কর দৃশ্য উপস্থাপন করে, তবে মানবসৃষ্ট মহাকাশ বর্জ্যের অনিয়ন্ত্রিত পুনঃপ্রবেশ আমাদের গ্রহের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ঘটনাটি একদিকে যেমন সাধারণ মানুষের মনে কৌতূহল ও বিস্ময় জাগিয়েছে, তেমনই মহাকাশ কার্যকলাপের নিরাপত্তা ও দায়িত্বশীলতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।