স্পেনের ঐতিহাসিক কর্ডোভা শহরে অষ্টম আন্তর্জাতিক পুষ্প উৎসব, ‘ফ্লোরা ২০২৫’, গত ১৩ অক্টোবর, ২০২৫, সোমবার থেকে শুরু হয়েছে। আগামী ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত দশ দিন ধরে চলা এই বর্ণাঢ্য আয়োজন শহরের পাঁচটি সুপরিচিত স্থানকে প্রাণবন্ত রঙ এবং গভীর দার্শনিক তাৎপর্যে মণ্ডিত করেছে। এই উৎসবের মাধ্যমে কর্ডোভা আধুনিক পুষ্পশিল্পের একটি বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে নিজের অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করেছে। এবারের অনুষ্ঠানের মূল প্রতিপাদ্য হলো ‘ভবিষ্যৎ’। এই থিমটি কেবল সৌন্দর্য প্রদর্শন নয়, বরং একটি আরও টেকসই এবং উন্নত বিশ্বের দিকে পরিবর্তনের অনুঘটক হিসেবে জীবন্ত প্রকৃতির অপরিহার্য ভূমিকাকে গভীরভাবে চিন্তা করতে উৎসাহিত করছে। প্রাকৃতিক শিল্পের মাধ্যমে ভবিষ্যতের রূপরেখা তৈরি করাই এই উৎসবের প্রধান লক্ষ্য।
এই উৎসবটি কর্ডোভার বহু পুরনো ঐতিহ্যবাহী বসন্তকালীন ‘প্যাটিও’ (উঠোন) উৎসবের আধুনিক ব্যাখ্যা হিসেবে কাজ করে, যেখানে উঠোনগুলি ফুল দিয়ে সজ্জিত করা হয়। এটি প্রাচীন ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিক পুষ্প সজ্জার অগ্রগামী পদ্ধতির মধ্যে এক অসাধারণ সাংস্কৃতিক সংযোগ স্থাপন করেছে, যা স্থানীয় সংস্কৃতি এবং আন্তর্জাতিক শিল্পের মিলন ঘটিয়েছে। এ বছর পাঁচটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী ঐতিহাসিক ভেতরের উঠোনগুলিকে (প্যাটিও) তাঁদের সৃজনশীলতার মাধ্যমে নতুন রূপে সাজিয়েছেন। এই শিল্পীরা তাঁদের কাজের মাধ্যমে গ্লোবাল ফ্লোরাল আর্টের মানদণ্ড নির্ধারণ করছেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রয়েছেন স্পেনের পাউলা আন্তা, যুক্তরাষ্ট্রের পুটনাম ফ্লাওয়ার্স এবং মেক্সিকোর লা মুসা দে লাস ফ্লোরেস। ব্রাজিল, স্পেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকো—এই চারটি দেশের প্রতিনিধিত্বকারী এই পাঁচজন শিল্পী ভবিষ্যতের প্রতি তাঁদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে পাঁচটি বিশাল আকারের শিল্পকর্ম তৈরি করেছেন। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো, মেজকিতার সংলগ্ন প্যাটিও দে লস নারানহোস-এ প্রদর্শিত হচ্ছে পুটনাম ফ্লাওয়ার্স-এর শিল্পকর্ম, যার শিরোনাম ‘ট্রামাস পাসাদাস, কালমা ফুতুরা’ (অতীতের নকশা, ভবিষ্যতের শান্তি)। এই কাজটি অতীত ও ভবিষ্যতের মধ্যে এক শান্তিময় সেতুবন্ধন তৈরি করেছে।
জিজাই কালচারা এবং কর্ডোভা সিটি কাউন্সিল সহ আয়োজকরা এই উৎসবে উদ্ভিদ শিল্পের ক্ষেত্রে নতুন এবং সাহসী পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য একটি উন্মুক্ত ও গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ তৈরি করেছেন। উৎসবের কর্মসূচিতে প্রায় একশোটি ইভেন্ট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে হাতে-কলমে শেখার কর্মশালা এবং বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এগুলি দর্শকদের উদ্ভিদবিদ্যা এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে তৈরি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এই উৎসবে উদ্ভিদের যোগাযোগ এবং তাদের বুদ্ধিমত্তা সংক্রান্ত অত্যন্ত আধুনিক বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলির উপর বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এটি ফ্লোরা ২০২৫-এর আন্তঃবিভাগীয় চরিত্রকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। উদাহরণস্বরূপ, মারিয়া কাস্তেলানোস এবং আলবার্তো ভালভার্দে উদ্ভিদের মধ্যে দূরবর্তী যোগাযোগ নিয়ে তাঁদের যুগান্তকারী গবেষণা উপস্থাপন করবেন, যা প্রকৃতিকে বোঝার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। এই ধরনের আলোচনাগুলি প্রমাণ করে যে উৎসবটি কেবল নান্দনিক নয়, শিক্ষামূলকও বটে।
এই দশ দিনব্যাপী দৃষ্টিনন্দন আয়োজন দর্শকদের সুযোগ করে দেয় যে তারা গভীরভাবে চিন্তা করুক—প্রাকৃতিক জগতের অন্তর্নিহিত জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা কীভাবে আমাদের কাঙ্ক্ষিত ভবিষ্যৎ গঠনে একটি মজবুত ভিত্তি স্থাপন করতে পারে। উৎসবের মূল লক্ষ্য হলো প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে আরও নিবিড় করা। সমস্ত প্রধান প্রদর্শনীতে প্রবেশ বিনামূল্যে রাখা হয়েছে, যা নিশ্চিত করে যে এই গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতাটি সমাজের বিস্তৃত পরিসরের শিল্পপ্রেমী এবং অনুরাগীদের জন্য সহজলভ্য হবে। ফ্লোরা ২০২৫ প্রতিটি অংশগ্রহণকারীকে আহ্বান জানায় যেন তারা এই ক্ষণস্থায়ী কিন্তু উজ্জ্বল পুষ্পসজ্জাগুলিকে কেবল চোখের আরামদায়ক সজ্জা হিসেবে না দেখে, বরং এগুলিকে নবায়ন, সৃজনশীলতা এবং একটি উন্নত ভবিষ্যতের প্রতি অভ্যন্তরীণ আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে বিবেচনা করে। এটি কর্ডোভাকে বিশ্ব মানচিত্রে এক অনন্য স্থান দিয়েছে।