পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্ক মরুভূমি, চিলির আতাকামা, ২০২৫ সালে 'দেসিয়ের্তো ফ্লোরিডো' (Desierto Florido) বা 'ফুলের মরুভূমি' নামে পরিচিত এক অসাধারণ প্রাকৃতিক ঘটনার সাক্ষী হলো। এই রূপান্তর—যেখানে একদা শুষ্ক ভূমি উজ্জ্বল রঙের গালিচায় ঢেকে যায়—তা মূলত শীতকালে হওয়া প্রচুর বৃষ্টির সরাসরি ফল। এই বৃষ্টি দশক ধরে বালির নিচে সুপ্ত থাকা বীজগুলিকে জাগিয়ে তুলেছে। ন্যাশনাল ফরেস্ট্রি কর্পোরেশন (CONAF) নিশ্চিত করেছে যে ফুল ফোটা সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি শুরু হয়েছিল এবং প্রত্যাশিতভাবেই অক্টোবরে তা তার শিখরে পৌঁছেছে।
CONAF-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, ফুল ফোটার চূড়ান্ত সময়কাল ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল, যা নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ধীরে ধীরে কমতে থাকবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জীবনের এই বিস্ফোরণ গত এক দশকের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এর কারণ হলো হুয়াস্কো প্রদেশে রেকর্ড করা প্রচুর বৃষ্টিপাত; উপকূলীয় অঞ্চলগুলিতে ৪০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা প্রকৃতির এই শক্তিশালী প্রতিক্রিয়াকে জলবায়ু চক্রের সাথে যুক্ত করছেন, বিশেষত এল নিনো (El Niño) ঘটনার প্রভাবকে দায়ী করছেন।
এই প্রাকৃতিক আশ্চর্যের কেন্দ্রবিন্দু ছিল লানোস দে চাল্লে জাতীয় উদ্যান (Llanos de Challe National Park) এবং এর পার্শ্ববর্তী হুয়াস্কো (Huasco) ও ভাল্লেনার (Vallenar) সহ বিভিন্ন কমিউনিটি। CONAF-এর ফিল্ড জোনস প্রধান, হোর্হে কারাবান্তেস (Jorge Carabantes), স্পষ্ট করেছেন যে ফুলের আবরণটি উত্তর দিকের তোতোর্যাল (Totoral) সেক্টর থেকে শুরু করে অঞ্চলের দক্ষিণ সীমানায় অবস্থিত কালেতা চানারাল দে আসেয়িতুনো (Caleta Chañaral de Aceituno) পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ার প্রত্যাশা করা হয়েছিল। এই সময়ে ২০০টিরও বেশি প্রজাতির উদ্ভিদ দেখা যায়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো স্থানীয় প্রজাতি যেমন আনায়ুকা (añanuca) (লাল ও হলুদ) এবং গুয়ানাকো পা (Guanaco paw) বা সিস্টান্থে লংগিস্কাপা (Cistanthe longiscapa)।
এই ঘটনাটি কেবল একটি পর্যটন আকর্ষণ নয়, বরং চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও পুনরুজ্জীবনের সম্ভাবনার এক শক্তিশালী বার্তা বহন করে। CONAF-এর আঞ্চলিক পরিচালক, সান্দ্রা মোরালেস (Sandra Morales), এবং কৃষিমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান কর্তেস অলিভারেস (Cristián Cortés Olivares) সহ অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তারা দর্শকদের সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। পর্যটকদের কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন তারা শুধুমাত্র প্রাকৃতিক পথ ধরে হাঁটেন, কোনো পোষা প্রাণী না আনেন এবং কোনো আবর্জনা না ফেলেন। ভবিষ্যৎ চক্রের জন্য প্রকৃতির এই ভঙ্গুর উপহারকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে এই সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যাবশ্যক।