বিজ্ঞানীরা আর্জেন্টিনার প্যাটাগোনিয়া অঞ্চলে প্যাটাগোটাইটান মেয়োরুম (Patagotitan mayorum) নামক এক বিশাল ডাইনোসরের প্রায় সম্পূর্ণ কঙ্কাল উন্মোচন করেছেন। এই বিশাল টাইটানোসর প্রায় ১০০ মিলিয়ন বছর আগে ক্রিটেশিয়াস যুগে পৃথিবীতে বিচরণ করত। এই আবিষ্কারটি এই বিশাল তৃণভোজী প্রাণীদের জীবন সম্পর্কে অভূতপূর্ব অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।
প্যাটাগোটাইটান মেয়োরুম আবিষ্কৃত বৃহত্তম ডাইনোসরগুলির মধ্যে অন্যতম। বিভিন্ন গবেষণা অনুসারে, এটি প্রায় ৩৭ মিটার (১২১ ফুট) লম্বা এবং এর ওজন প্রায় ৬৯ টন পর্যন্ত হতে পারে বলে অনুমান করা হয়। যদিও অন্যান্য টাইটানোসরের আকার আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হয়, তবে সেই অনুমানগুলি প্রায়শই অসম্পূর্ণ অবশেষের উপর ভিত্তি করে করা হয়। এই নতুন নমুনাটিতে মূল হাড়ের প্রায় ৭০% পাওয়া গেছে, যা প্রাণীটির শারীরস্থান এবং আকার সম্পর্কে আরও নির্ভুল ধারণা দেয়।
এই কঙ্কালটি আর্জেন্টিনার প্যাটাগোনিয়া অঞ্চলের চুবুত প্রদেশে আবিষ্কৃত হয়েছে, যা ডাইনোসরের জীবাশ্মের জন্য বিখ্যাত। ২০১৪ সালে জীবাশ্মবিদদের একটি দল এই খননকার্য শুরু করে এবং বিশাল হাড়গুলি সাবধানে উদ্ধার ও সংরক্ষণের জন্য নিবেদিতভাবে কাজ করে। প্যাটাগোটাইটান মেয়োরুমের কঙ্কালের ব্যতিক্রমী সম্পূর্ণতা গবেষকদের এর শারীরবৃত্তীয় গঠন বিস্তারিতভাবে অধ্যয়ন করার সুযোগ করে দিয়েছে, যা এর বায়োমেকানিক্স, বৃদ্ধির ধরণ এবং বিবর্তনীয় সম্পর্ক সম্পর্কে নতুন তথ্য উন্মোচন করেছে।
হাড়গুলির বিশ্লেষণ থেকে জানা যায় যে, মৃত্যুর সময় প্যাটাগোটাইটান মেয়োরুম সম্ভবত তখনও বাড়ছিল, যা ইঙ্গিত দেয় যে এটি আরও দীর্ঘজীবী হলে হয়তো আরও বড় হতে পারত। এই আবিষ্কারটি টাইটানোসররা দলবদ্ধভাবে বাস করত এই ধারণাকেও সমর্থন করে, কারণ একই স্থানে একাধিক ব্যক্তির দেহাবশেষ পাওয়া গেছে।
বর্তমানে, প্যাটাগোটাইটান মেয়োরুমের কঙ্কাল আর্জেন্টিনার ট্রেলেউ-এর এজিডিও ফেরুগ্লিও প্যালিওন্টোলজিক্যাল মিউজিয়ামে (Egidio Feruglio Paleontological Museum) প্রদর্শিত হচ্ছে। যারা জাদুঘরে যেতে পারছেন না, তাদের জন্য 'ম্যাক্সিমো' (Máximo) নামে পরিচিত প্যাটাগোটাইটান মেয়োরুমের একটি কঙ্কালের প্রতিরূপ শিকাগোর ফিল্ড মিউজিয়ামেও (Field Museum) প্রদর্শিত হচ্ছে। এই প্রদর্শনীটি পৃথিবীর বুকে বিচরণকারী বৃহত্তম প্রাণীদের মধ্যে একটির সাথে একটি বাস্তব সংযোগ স্থাপন করে।
এই আবিষ্কারটি কেবল ডাইনোসরের বৈচিত্র্য এবং বিবর্তন সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকেই সমৃদ্ধ করে না, বরং আমাদের গ্রহের সুদূর অতীতের রহস্য উন্মোচনে জীবাশ্মবিদ্যার গবেষণার গুরুত্বকেও তুলে ধরে। এই বিশাল প্রাণীর হাড়ের সম্পূর্ণতা বিজ্ঞানীদের এর জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস এবং পরিবেশের সাথে এর সম্পর্ক সম্পর্কে আরও গভীর ধারণা পেতে সাহায্য করেছে।