স্থলভিত গ্লেশিয়ারের পশ্চাতপসরণ, বরফসমতল ক্যালভিং প্রক্রিয়ার কারণে
পূর্ব অ্যান্টার্কটিকার হেক্টোরিয়া হিমবাহের অভূতপূর্ব পশ্চাদপসরণ: জলবায়ু পরিবর্তনের নতুন সতর্কবার্তা
সম্পাদনা করেছেন: Tetiana Martynovska 17
পূর্ব অ্যান্টার্কটিকা উপদ্বীপের হেক্টোরিয়া হিমবাহে একটি অপ্রত্যাশিত দ্রুত পশ্চাদপসরণ আন্তর্জাতিক গবেষণায় নথিভুক্ত হয়েছে, যা প্রকৃতির স্থিতিশীলতার ধারণাকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। জার্নাল 'নেচার জিওসায়েন্স'-এ প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা যায়, ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে মাত্র দুই মাসে হিমবাহটি আট কিলোমিটারেরও বেশি বরফ হারিয়েছে। এই পশ্চাদপসরণের গতি পূর্বে নথিভুক্ত স্থলভাগের হিমবাহগুলির তুলনায় দশ গুণ বেশি ছিল বলে বিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেছেন।
Hektoria Glacier
এই পর্যবেক্ষণগুলি স্যাটেলাইট চিত্র, এরিয়াল ফটোগ্রাফ এবং উচ্চতা পরিমাপক তথ্যের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে। সবচেয়ে বিস্ময়কর দিক হলো, এই বরফের ক্ষয় ভাসমান বরফে নয়, বরং পাথরের ওপর ভর করে থাকা বরফে ঘটেছে, যা সরাসরি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে। বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন, এই হিমবাহটি একটি সমতল ভূমিতে (আইস প্লেইন) পৌঁছানোর কারণে এই দ্রুত গলে যাওয়া সম্ভব হয়েছে, যেখানে বরফের ভিত্তি সমুদ্রের জলের প্লবতা বলের সংস্পর্শে আসে এবং দ্রুত বিচ্ছিন্নতা শুরু হয়। এই ধরনের দ্রুত পশ্চাদপসরণ পূর্বে শেষ বরফ যুগের শেষের দিকের ঘটনার সাথে তুলনীয়।
ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডো বোল্ডারের গবেষকরা এই প্রক্রিয়াটিকে হিমবাহের অস্থিরতার একটি নতুন দিক হিসেবে দেখছেন, যা এই অঞ্চলের বৃহত্তর হিমবাহগুলিতেও ঘটতে পারে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির পূর্বাভাসকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে। যদিও এই হিমবাহটি তুলনামূলকভাবে ছোট, এর দ্রুত ক্ষয় একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা বহন করে। যদি বৃহত্তর হিমবাহগুলিতে এমন ঘটনা ঘটে, তবে বিশ্বব্যাপী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হার মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হবে।
পূর্ব অ্যান্টার্কটিকার বরফের চাদর, যা মহাদেশের দুই-তৃতীয়াংশ জুড়ে বিস্তৃত, সম্পূর্ণ গলে গেলে প্রায় ৫২ মিটার সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে, যা পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার চেয়ে অনেক বেশি। যদিও পূর্ব অ্যান্টার্কটিকা ঐতিহাসিকভাবে স্থিতিশীল বলে বিবেচিত, সাম্প্রতিক গবেষণাগুলি ইঙ্গিত দেয় যে গ্রীষ্মকালে সমুদ্রের উষ্ণ জলের অনুপ্রবেশের কারণে সেখানেও বরফের শেল্ফ গলে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে, যা বর্তমান মডেলগুলিতে পুরোপুরি প্রতিফলিত হচ্ছে না।
এই ঘটনাটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বোঝার এবং প্রশমিত করার প্রয়োজনীয়তাকে আরও জোরালোভাবে তুলে ধরে। এই প্রেক্ষাপটে, বিজ্ঞানীরা অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ হিমবাহ চিহ্নিত করতে এবং নিবিড় পর্যবেক্ষণে অগ্রাধিকার দিতে এই পর্যবেক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। জাতিসংঘের দপ্তর জেনেভায় সতর্ক করেছিল যে বর্তমান হারে গলতে থাকলে একবিংশ শতাব্দীর মধ্যে অনেক অঞ্চলের হিমবাহ টিকে থাকতে পারবে না, যা তাদের জল সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল কোটি কোটি মানুষের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। এই ধরনের অপ্রত্যাশিত পরিবর্তনগুলি আমাদের গ্রহের স্থিতিশীলতা সম্পর্কে গভীর মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানায়।
উৎসসমূহ
Antena3
El País
United Nations Office at Geneva
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
