নেপোলিয়নের রুশ বিপর্যয়ে সালমোনেলা ও বোরেলিয়ার ভূমিকা: ডিএনএ বিশ্লেষণ নতুন সত্য উন্মোচন করল

সম্পাদনা করেছেন: Tetiana Martynovska 17

নেপোলিয়ন বোনাপার্টের ১৮১২ সালের কুখ্যাত রুশ অভিযান এবং তার সেনাবাহিনীর বিপর্যয়কর পশ্চাদপসরণ ইতিহাসের এক গভীর ক্ষতচিহ্ন হিসেবে চিহ্নিত। এতদিন এই বিশাল বাহিনীর পতনের প্রধান কারণ হিসেবে টাইফাস রোগকে দায়ী করা হতো। তবে, সাম্প্রতিক ডিএনএ বিশ্লেষণ এই ধারণাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে, যা ইঙ্গিত করে যে একাধিক জীবাণু সম্মিলিতভাবে এই ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছিল।

ইনস্টিটিউট পাস্তুর-এর মাইক্রোবিয়াল প্যালিওজিনোমিক্স ইউনিটের নেতৃত্বে থাকা নিকোলাস রাসকোভান এবং তাঁর গবেষক দল এই যুগান্তকারী তথ্য উন্মোচন করেছেন। তাঁরা লিথুয়ানিয়ার ভিলনিয়াসে সমাধিস্থ করা ১৩ জন সৈনিকের দাঁত থেকে ডিএনএ নিষ্কাশন ও পরীক্ষা করেন, যারা ফরাসি সেনাবাহিনীর প্রত্যাবর্তনের পথে প্রাণ হারিয়েছিলেন। এই গবেষণার ফলাফল 'কারেন্ট বায়োলজি' জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে, যা পুরনো ঐতিহাসিক নথিগুলিকে আধুনিক বৈজ্ঞানিক প্রমাণের আলোকে যাচাই করছে।

বিশ্লেষণে পূর্বে সন্দেহ করা টাইফাসের জীবাণু, Rickettsia prowazekii-এর কোনো স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি, যদিও পূর্ববর্তী গবেষণায় এর উপস্থিতি মিলেছিল। বরং, গবেষকরা দুটি অতিরিক্ত ব্যাকটেরিয়ার জেনেটিক স্বাক্ষর শনাক্ত করেছেন: Salmonella enterica subsp. enterica serovar Paratyphi C, যা প্যারাইফয়েড জ্বর সৃষ্টি করে, এবং Borrelia recurrentis, যা রিল্যাপসিং ফিভার বা প্রত্যাবর্তনকারী জ্বর ঘটায়। প্যারাইফয়েড জ্বর উচ্চ জ্বর, ক্লান্তি এবং হজমের সমস্যা সৃষ্টি করে, যা দূষিত খাদ্য বা জলের মাধ্যমে ছড়ায়। অন্যদিকে, রিল্যাপসিং ফিভার উকুনবাহিত এবং এটি উচ্চ জ্বর, বমি, পেশী ব্যথা এবং র‍্যাশ সহ পর্যায়ক্রমিক জ্বরের জন্ম দেয়।

গবেষণা দলের তথ্যমতে, বিশ্লেষিত ১৩ জনের মধ্যে চারজনের দাঁতে প্যারাইফয়েড জ্বরের জীবাণু এবং দু'জনের দাঁতে রিল্যাপসিং ফিভারের জীবাণু পাওয়া গেছে। এই দুটি রোগের একইসাথে উপস্থিতি সৈন্যদের দুর্বল অবস্থাকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছিল, যখন তারা এমনিতেই তীব্র ঠান্ডা, ক্ষুধা এবং অপরিস্কার পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে লড়াই করছিল। রাসকোভান উল্লেখ করেছেন যে, যদিও এই রোগগুলি আজকের প্রেক্ষাপটে সবসময় মারাত্মক নাও হতে পারে, কিন্তু নেপোলিয়নের সেনাবাহিনীর মতো চরম নাজুক পরিস্থিতিতে যেকোনো সংক্রমণই প্রাণঘাতী হতে পারে।

এই আবিষ্কার প্রমাণ করে যে, ইতিহাসের বিশাল ঘটনাগুলি কেবল সামরিক কৌশল বা আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে না, বরং মানবদেহের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র শক্তির সম্মিলিত প্রভাবেই নির্ধারিত হয়। এই সৈন্যরা কেবল শত্রুর মুখোমুখি হননি, বরং তাদের নিজেদের শরীরের অভ্যন্তরেও এক নীরব সংগ্রাম চলছিল, যা তাদের শারীরিক স্থিতিকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল যেখানে সামান্যতম প্রতিকূলতাও অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। এই বিপর্যয়কর পশ্চাদপসরণে আনুমানিক তিন লক্ষ সৈন্য প্রাণ হারিয়েছিল, যা নেপোলিয়নের সামরিক কৌশলের উপর এক বিশাল আঘাত হেনেছিল। এই অনুসন্ধান আমাদের শেখায় যে, আপাতদৃষ্টিতে বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলি আসলে এক বৃহত্তর আন্তঃসম্পর্কের অংশ, যেখানে প্রতিটি দুর্বলতা একটি বৃহত্তর কাঠামোর প্রতিফলন ঘটায়।

উৎসসমূহ

  • News Flash

  • Ars Technica

  • Chemical & Engineering News

  • The Washington Post

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।