গবেষকরা মনে করেন তারা বুঝে গেছেন কেন পৃথিবীর কক্ষপথে চাঁদের পিছনে একটি পাতলা, অনিয়মিত-আকারের ধুলোর মেঘ তৈরি হয়।
চরম তাপমাত্রার ওঠানামা চাঁদের অসম ধূলিকণা আস্তরণের চালক: নতুন গবেষণা
সম্পাদনা করেছেন: Tetiana Martynovska 17
গ্রহ বিজ্ঞানীরা চাঁদের নিকটবর্তী পরিবেশকে রূপদানকারী একটি গতিশীল প্রক্রিয়া উন্মোচন করেছেন: এটি হলো চন্দ্রপৃষ্ঠকে আবৃত করে থাকা একটি অসম ধূলিকণা মেঘের সৃষ্টি। *Journal of Geophysical Research: Planets*-এ প্রকাশিত নতুন গবেষণা এই অসম বন্টনের জন্য সরাসরি চাঁদের আলোকিত এবং ছায়াযুক্ত গোলার্ধের মধ্যেকার তীব্র তাপীয় বৈসাদৃশ্যকে দায়ী করেছে। ফলস্বরূপ, ধূলিকণাগুলি সূর্যের দিকে মুখ করে থাকা অংশে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ঘনীভূত হচ্ছে। এই আবিষ্কার মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
চাঁদের পৃষ্ঠটি রেগোলিথের একটি সূক্ষ্ম স্তর দ্বারা আবৃত, যা প্রতিনিয়ত ক্ষুদ্র উল্কাপিণ্ডের (micrometeoroids) আঘাতের ফলে আলোড়িত হয়। পূর্বে অনুমান করা হয়েছিল যে ধূলিকণা আস্তরণের এই অসমতা দিনের বেলায় আঘাতকারী নির্দিষ্ট উল্কাপিণ্ড স্রোতের (meteoroid streams) প্রভাবের সাথে সম্পর্কিত। তবে বর্তমান গবেষণাটি চন্দ্র ভূখণ্ডের উপর জুড়ে থাকা নাটকীয় তাপমাত্রার পার্থক্যের দিকে মনোযোগ সরিয়ে দিয়েছে। দিনের বেলায় তাপমাত্রা পৃথিবীর তাপমাত্রার তুলনায় বহুগুণ বেড়ে যায়, অন্যদিকে রাতের দিকটি তীব্র ঠান্ডায় জমে যায়, যা গড় অ্যান্টার্কটিক তাপমাত্রার চেয়েও চার গুণ শীতল। এই দুই চরম অবস্থার মধ্যে তাপমাত্রার পার্থক্য বিস্ময়করভাবে ২৮৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বিজ্ঞানীরা গড় পরিস্থিতিকে তুলে ধরার জন্য দুটি স্বতন্ত্র তাপমাত্রার মানদণ্ড ব্যবহার করে ক্ষুদ্র উল্কাপিণ্ডের পতনের মডেল তৈরি করেছিলেন: চন্দ্রের দিনের জন্য ১১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাতের জন্য মাইনাস ১৮৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সিমুলেশনগুলি পৃষ্ঠের ঘনত্ব এবং ধূলিকণা নির্গমনের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রকাশ করেছে। বড় বোল্ডার দ্বারা ঘন পৃষ্ঠে আঘাত লাগলে আরও বেশি ধূলিকণার মেঘ তৈরি হয়, যা ইঙ্গিত দেয় যে এই ধূলিকণা গঠনগুলি পর্যবেক্ষণ করে চাঁদের ভূত্বকের ঘনত্ব ম্যাপ করা যেতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, দিনের বেলায় উল্কাপিণ্ডের আঘাতে রাতের বেলার আঘাতের তুলনায় ৬ থেকে ৮ শতাংশ বেশি কণা নির্গত হতে দেখা গেছে।
চন্দ্র দিনের তীব্র তাপ এই বৈষম্যের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে। এই চরম পরিস্থিতিতে উৎপন্ন ধূলিকণাগুলির মধ্যে পর্যাপ্ত গতিশক্তি (kinetic energy) থাকে, যা সেগুলিকে পৃষ্ঠ থেকে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত কক্ষপথের উচ্চতায় আরোহণ করতে সাহায্য করে। কার্যকরভাবে, এটিই সূর্যের দিকে মুখ করে থাকা অংশে অতিরিক্ত ধূলিকণার সৃষ্টি করে। এই ঘটনাটি চন্দ্রপৃষ্ঠের গতিশীলতা বোঝার জন্য একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে এবং পৃথিবীর বাইরে ভবিষ্যতের প্রচেষ্টার জন্য এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে।
এই ধূলিকণা মেঘের প্রক্রিয়াগুলি বোঝা এখন সিসলুনার স্পেসে (cislunar space) কার্যক্রমের টেকসই কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্য একটি অপরিহার্য পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। সৌর শক্তি এবং পৃষ্ঠ উপাদানের মধ্যে ক্রমাগত মিথস্ক্রিয়া চাঁদকে প্রদক্ষিণকারী বা অতিক্রমকারী যেকোনো মহাকাশযানের জন্য অপারেশনাল চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। সক্রিয় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে, চীন সম্ভাব্য অরবিটাল ধ্বংসাবশেষের ঝুঁকি প্রশমনের লক্ষ্যে প্রোটোকল স্থাপনের জন্য নাসার (NASA) সাথে আলোচনা শুরু করেছে। এই পদক্ষেপটি ভাগ করা মহাকাশ ডোমেনের প্রতি একটি সমন্বিত তত্ত্বাবধানের গুরুত্বকে তুলে ধরে।
উৎসসমূহ
ФОКУС
Focus.ua
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
