ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি দ্বীপে প্রত্নতাত্ত্বিকরা লক্ষাধিক বছরের পুরনো পাথরের হাতিয়ার আবিষ্কার করেছেন, যা এই অঞ্চলে আদিম মানুষের বসতি স্থাপনের সময়কালকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছে। এই আবিষ্কারটি প্রায় ১.০৪ থেকে ১.৪৮ মিলিয়ন বছর আগের, যা এই দ্বীপপুঞ্জে মানব পূর্বপুরুষদের উপস্থিতির প্রাচীনতম প্রমাণ। সোয়েংয়ের কাছে সোপ্পেং রিজেন্সির উজুং গ্রামের কাছে অবস্থিত ক্যালিও নামক স্থানে এই হাতিয়ারগুলো পাওয়া গেছে।
চের্ট (chert) নামক পাথর ব্যবহার করে পারকাশন ফ্ল্যাকিং (percussion flaking) পদ্ধতিতে এই সরঞ্জামগুলি তৈরি করা হয়েছিল, যা ধারালো প্রান্ত তৈরি করত। এই আবিষ্কারটি ওয়ালোসিয়া অঞ্চলে (Wallacea) আদিম মানুষের উপস্থিতির সবচেয়ে পুরনো নিদর্শন, যা এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যবর্তী একটি দ্বীপপুঞ্জ। হাতিয়ার প্রস্তুতকারীদের পরিচয় এখনও অজানা, কারণ এর সাথে কোনও জীবাশ্ম পাওয়া যায়নি। গবেষকরা ধারণা করছেন যে এই হাতিয়ারগুলি সম্ভবত হোমো ইরেক্টাস (Homo erectus) দ্বারা তৈরি হয়েছিল, যারা প্রায় ১.৬ মিলিয়ন বছর আগে জাভাতে পৌঁছেছিল। অথবা এটি হোমো ইরেক্টাসেরই একটি ভিন্ন প্রজাতি হতে পারে যা সুলাওয়েসি দ্বীপে বিচ্ছিন্নভাবে বিকশিত হয়েছিল। এই আবিষ্কারটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দ্বীপে, যেমন ফ্লোরেস এবং লুজনে, একই সময়ে মানুষের উপস্থিতির ক্রমবর্ধমান প্রমাণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এই হাতিয়ারগুলির অস্তিত্ব প্রশ্ন তোলে যে কীভাবে এই আদিম মানুষগুলি সমুদ্র পাড়ি দিয়ে এই দ্বীপগুলিতে পৌঁছেছিল, যেখানে তখন হাঙর, কুমির এবং শক্তিশালী স্রোতের মতো বিপদ ছিল। গবেষকদের মতে, এই হাতিয়ারগুলি প্রায় ১ মিলিয়ন থেকে ১.৫ মিলিয়ন বছর পুরনো, যা ইঙ্গিত দেয় যে আমাদের প্রজাতির বিবর্তনের অনেক আগেই সুলাওয়েসি দ্বীপে অজানা কোনও মানব পূর্বপুরুষের বাস ছিল। এই আবিষ্কারটি এই অঞ্চলের মানব বিবর্তন সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে নতুনভাবে সাজাচ্ছে। পূর্বে, সুলাওয়েসি দ্বীপে মানুষের উপস্থিতির প্রাচীনতম প্রমাণ ছিল প্রায় ১,৯৪,০০০ বছর আগের পাথরের হাতিয়ার। এই নতুন আবিষ্কারটি কেবল সুলাওয়েসি নয়, বরং ওয়ালোসিয়া দ্বীপপুঞ্জের সামগ্রিক মানব ইতিহাস সম্পর্কেও নতুন ধারণা দিচ্ছে।
ফ্লোরেস দ্বীপে আবিষ্কৃত প্রায় ১.০২ মিলিয়ন বছর আগের হাতিয়ারগুলির সাথে এই নতুন আবিষ্কারের তুলনা করলে বোঝা যায় যে, সুলাওয়েসি হয়তো ফ্লোরেসের আদিম বাসিন্দাদের আগমনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ ছিল। এই হাতিয়ারগুলি তৈরি করার জন্য আদিম মানুষেরা সম্ভবত প্রায় ৫০ কিলোমিটারেরও বেশি খোলা সমুদ্র পাড়ি দিয়েছিল, যা সেই সময়ের জন্য একটি বিশাল অর্জন ছিল। এটি সম্ভবত প্রাকৃতিক ভাসমান গাছের ভেলা বা অন্য কোনও আকস্মিক উপায়ে ঘটেছিল, কারণ সেই সময়ে মানুষের নৌকা তৈরির প্রযুক্তি ছিল না। এই আবিষ্কারটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আদিম মানব বসতি এবং তাদের প্রযুক্তিগত ক্ষমতা সম্পর্কে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। এই প্রাচীন বাসিন্দাদের পরিচয় এবং তাদের অভিবাসন পথ সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে ভবিষ্যতে আরও গবেষণা এবং খননকার্য প্রত্যাশিত।