শীতের প্রতিকূলতায় বন্যপ্রাণীর টিকে থাকার কৌশল: বিশ্রাম ও সক্রিয় অভিযোজন
সম্পাদনা করেছেন: Olga Samsonova
প্রকৃতিতে শীতের প্রকোপ বাড়লে হিমেল হাওয়া, তুষারপাত এবং খাদ্যের অভাব বন্যপ্রাণীদের জন্য এক কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এই প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার জন্য প্রাণিজগৎ তাদের সহজাত প্রজ্ঞা ও শারীরিক সক্ষমতাকে কাজে লাগায়, যা মূলত দুটি প্রধান ধারায় বিভক্ত: গভীর বিশ্রাম এবং নিরন্তর সক্রিয়তা। এই কৌশলগুলি কেবল তাদের অস্তিত্ব রক্ষা করে না, বরং প্রকৃতির চক্রের সঙ্গে তাদের গভীর সংযোগকেও তুলে ধরে।
যেসব প্রাণী শীতের তীব্রতা এড়িয়ে যেতে গভীর বিশ্রামের পথ বেছে নেয়, তাদের মধ্যে বনবিড়াল, হ্যামস্টার এবং আলপাইন মারমোটস উল্লেখযোগ্য। এই প্রাণীরা সত্যিকারের শীতনিদ্রা বা হাইবারনেশনে প্রবেশ করে, যেখানে তাদের দেহের বিপাক ক্রিয়া নাটকীয়ভাবে হ্রাস পায়। উদাহরণস্বরূপ, আলপাইন মারমোটস প্রায় আট মাস গভীর ঘুমে থাকতে পারে, যেখানে তাদের হৃদস্পন্দন মিনিটে ১২০ বার থেকে কমে মাত্র ৩-৪ বারে নেমে আসে। এই সময়ে সামান্যতম বিঘ্নও তাদের সঞ্চিত শক্তি দ্রুত ক্ষয় করে দিতে পারে, যা তাদের জীবনধারণের জন্য মারাত্মক হতে পারে। একইভাবে, ব্যাঙ, সাপ ও গিরগিটির মতো শীতল রক্তের প্রাণীরাও শীতনিদ্রায় যায়, যেখানে তাদের দেহের তাপমাত্রা পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। কিছু জলজ ব্যাঙ পুকুরের তলদেশের নরম কাদা বা পলিস্তরে আশ্রয় নেয়, যা তাদের বরফের স্তর থেকে সুরক্ষিত রাখে।
অন্যদিকে, কিছু প্রাণী শীতের মোকাবিলা করে সক্রিয় থেকে, নিজেদের শারীরিক পরিবর্তন ও আচরণের মাধ্যমে। বুনো শিয়াল, নেকড়ে, বুনো শূকর এবং হরিণের মতো প্রাণীরা এই দলের অন্তর্ভুক্ত। এই সক্রিয় প্রাণীরা শীতের জন্য প্রস্তুত হতে তাদের দেহের ওপর নির্ভর করে। যেমন, লাল হরিণ খাদ্যের স্বল্পতা মেটাতে তাদের পাকস্থলী ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আকার হ্রাস করে। বুনো শূকর তাদের ঘন অভ্যন্তরীণ লোমের সাহায্যে আর্দ্রতা প্রতিরোধ করে এবং ঘন ঝোপঝাড়ের মধ্যে একত্রিত হয়ে উষ্ণতা বজায় রাখে। মেরু শেয়ালের মতো কিছু প্রাণী তাদের দেহের আকৃতি কিছুটা গোলগাল করে এবং কান ও নাকের মতো অঙ্গের আকার ছোট রাখে, যা তাপ ধরে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া, আর্মিন (ermine) নামক বেজি ছদ্মবেশের জন্য শীতকালে তাদের লোমের রঙ সাদা করে নেয়, যা বরফের মধ্যে শিকার ও আত্মরক্ষায় সুবিধা দেয়।
এই কঠিন সময়ে মানুষের সচেতনতা বন্যপ্রাণীদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ অবলম্বন হতে পারে। বনের মধ্যে হাঁটার সময় চিহ্নিত পথ অনুসরণ করা উচিত, যাতে ঘুমন্ত বা বিশ্রামরত কোনো প্রাণীর স্বাভাবিক চক্রে ব্যাঘাত না ঘটে। বাগান বা বাড়ির আশেপাশে পাতা বা শুকনো কাঠের স্তূপ সরিয়ে না ফেলা জরুরি, কারণ এগুলি হগ বা সজারুর মতো ছোট প্রাণীগুলির জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে। তবে, সাধারণ বনাঞ্চলে বা মাঠে প্রাণীদের অতিরিক্ত খাদ্য সরবরাহ করা উচিত নয়, কারণ তারা নিজেদের খাদ্যের জন্য প্রকৃতিগতভাবেই অভিযোজিত। শুধুমাত্র বাগান পাখিদের জন্য পরিষ্কার জল ও নির্দিষ্ট খাদ্য সরবরাহ করা যেতে পারে, কিন্তু অতিরিক্ত খাবার পরিবেশ দূষণ বা অবাঞ্ছিত প্রাণীর আগমন ঘটাতে পারে। এই সময়টিকে কেবল টিকে থাকার সংগ্রাম হিসেবে না দেখে, প্রকৃতির নিজস্ব ছন্দে প্রতিটি সৃষ্টির স্থিতিস্থাপকতার এক মহৎ প্রকাশ হিসেবে দেখা যেতে পারে, যেখানে প্রতিটি প্রাণী তাদের নিজস্ব উপায়ে জীবনের প্রবাহকে সম্মান জানাচ্ছে।
উৎসসমূহ
NWZ Online
Winteraktive Tiere - LBV Naturschwärmer
Tiere und Pflanzen im Winter: Jetzt ist mal Ruhe, oder? – DW – 01.02.2025
Vögel im Winter: So können Sie Wintervögeln helfen | PETA
Tiere im Winter - WWF Junior
Winterruhe? Diese Tiere können Sie trotzdem im Garten sehen
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
