নাগাল্যান্ডে আমুর ফ্যালকনের জন্য সাময়িক 'নীরব বলয়' ঘোষণা: সম্মিলিত সুরক্ষার অঙ্গীকার
সম্পাদনা করেছেন: Olga Samsonova
নাগাল্যান্ডের ওখা জেলার পাংতি গ্রামে প্রতি বছর পরিযায়ী আমুর ফ্যালকনের বার্ষিক সমাবেশকে সুরক্ষিত রাখতে সাময়িক 'নীরব বলয়' ঘোষণা করা হয়েছে। এই পদক্ষেপটি ২০২৫ সালের ৪ঠা নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে এবং এটি পাংতি গ্রামের এই পরিযায়ী পাখির জমায়েতের বিশ্বব্যাপী গুরুত্বকে তুলে ধরে। এই সংরক্ষিত এলাকাটি পরিব্রাজনের মরসুমে, অর্থাৎ অক্টোবর ও নভেম্বর মাস জুড়ে, পাখির বিশ্রামের স্থানের চারপাশে ৩ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ পর্যন্ত বিস্তৃত।
স্থানীয় প্রশাসন গ্রামবাসীদের আতশবাজি ফাটানো বা উচ্চস্বরে গান বাজানো থেকে বিরত থাকতে বিশেষভাবে অনুরোধ করেছে। এই অনুরোধের ভিত্তি হলো বৈজ্ঞানিক গবেষণা, যা নিশ্চিত করে যে উচ্চ মাত্রার শব্দ বন্য পাখিদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করতে পারে। এর ফলে পাখিরা গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থল ত্যাগ করতে বাধ্য হতে পারে এবং প্রজনন ও টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় যোগাযোগ ব্যাহত হতে পারে। এই সংরক্ষণমূলক ব্যবস্থাটি সেই সমস্ত ফ্যালকনদের সুরক্ষা প্রদান করে, যারা বন্যপ্রাণী (সুরক্ষা) আইন, ১৯৭২ এবং পরিযায়ী প্রজাতি সংক্রান্ত কনভেনশনের অধীনে সুরক্ষিত।
আমুর ফ্যালকনগুলি সাইবেরিয়া এবং উত্তর চীন থেকে তাদের প্রজনন ক্ষেত্র থেকে উড়ে আসে এবং শীতকালে দক্ষিণ আফ্রিকার উষ্ণতর জলবায়ুর দিকে যাত্রা করে। এই দীর্ঘ যাত্রাপথে, বিশেষত অক্টোবর ও নভেম্বরে, তারা উত্তর-পূর্ব ভারতে, বিশেষ করে নাগাল্যান্ডের দোয়াং জলাধার সংলগ্ন পাংতি গ্রামে বিশ্রাম ও শক্তি সঞ্চয়ের জন্য থামে। এই স্থানটি বিশ্বের বৃহত্তম আমুর ফ্যালকনের সমাবেশস্থল হিসেবে পরিচিত, যেখানে একসময় ১০০,০০০-এরও বেশি পাখি জড়ো হয়েছিল, যা নাগাল্যান্ডকে 'ফ্যালকন ক্যাপিটাল অফ দ্য ওয়ার্ল্ড' হিসেবে পরিচিতি এনে দিয়েছে।
এই পাখিগুলির সুরক্ষার ক্ষেত্রে একসময় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ২০১২ সালে এই অঞ্চলে হাজার হাজার পাখি ফাঁদে পড়ে মারা যাওয়ার ঘটনা আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত হয়েছিল। তবে, এর পরপরই স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং ২০১৩ সাল নাগাদ পাখির হত্যা প্রায় শূন্যে নেমে আসে, যা স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর রূপান্তরের ইঙ্গিত দেয়। এই পাখিগুলির সংরক্ষণের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে, নাগাল্যান্ড সরকার কঠোর নীতি গ্রহণ করেছে, যেখানে পাখিদের হত্যা বা ফাঁদে ফেলার সঙ্গে জড়িত গ্রামগুলির সরকারি অনুদান পর্যালোচনা ও স্থগিত করার সতর্কতা জারি করা হয়েছে। উপরন্তু, ২০০৯ সাল থেকে স্যাটেলাইট ট্যাগের মাধ্যমে এদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, যা সংরক্ষণ প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করেছে।
এই পাখিগুলির প্রায় ২২,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পরিযান পথটি বিশ্বের যেকোনো শিকারী পাখির দীর্ঘতম সমুদ্র অতিক্রমকারী পথগুলির মধ্যে অন্যতম, যা এই বিরতির স্থানগুলির গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এই অনন্য পরিবেশগত ঘটনাটি বজায় রাখার জন্য স্থানীয় প্রশাসন সকল নাগরিক, সম্প্রদায় এবং দর্শকদের সহযোগিতা কামনা করছে, যাতে নাগাল্যান্ডের সফল বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের বৈশ্বিক খ্যাতি অক্ষুণ্ণ থাকে।
উৎসসমূহ
newKerala.com
Nagaland: Wokha declared ‘temporary silence zone’ for migrating Amur Falcons
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
