ডলফিনের অবিশ্বাস্য শ্রবণশক্তি: জলের নিচে এক অসাধারণ ক্ষমতা

সম্পাদনা করেছেন: Olga Samsonova

মানুষের শ্রবণশক্তির চেয়েও অনেক বেশি তীক্ষ্ণ শ্রবণশক্তি অনেক প্রাণীর মধ্যেই দেখা যায়। এদের মধ্যে ডলফিন অন্যতম, যাদের শ্রবণ ক্ষমতা তাদের বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের শ্রবণসীমা যেখানে ২০ হার্টজ থেকে ২০ কিলোহার্টজ পর্যন্ত, সেখানে ডলফিন ২০ হার্টজ থেকে ১৫০ কিলোহার্টজ পর্যন্ত শব্দ শুনতে পায়, যা মানুষের চেয়ে প্রায় সাত গুণ বেশি। এমনকি কিছু ডলফিন ২০০ কিলোহার্টজ পর্যন্ত শব্দ শুনতে সক্ষম।

ডলফিনরা জলের নিচে নিজেদের পথ খুঁজে বের করতে এবং শিকার ধরতে 'ইকোলোকেশন' নামক এক বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে। তারা তাদের নিচের চোয়াল ব্যবহার করে ক্লিক শব্দ তৈরি করে এবং সেই শব্দের প্রতিধ্বনি বিশ্লেষণ করে চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা লাভ করে। এই উন্নত শ্রবণ ক্ষমতা তাদের জলের নিচে বিভিন্ন বস্তু ও শিকারকে নির্ভুলভাবে শনাক্ত করতে সাহায্য করে, যা তাদের জলজ জীবনের জন্য এক অসাধারণ অভিযোজন।

ইকোলোকেশন প্রক্রিয়ায়, ডলফিনরা তাদের কপালের 'মেলন' নামক একটি বিশেষ অঙ্গের মাধ্যমে শব্দ তরঙ্গকে একটি নির্দিষ্ট দিকে চালিত করে। এই শব্দ তরঙ্গ জলের মধ্যে দিয়ে গিয়ে বিভিন্ন বস্তুতে আঘাত করে এবং প্রতিধ্বনিত হয়ে ডলফিনের নিচের চোয়ালে ফিরে আসে। চোয়ালের মধ্যে থাকা বিশেষ চর্বিযুক্ত টিস্যু এই শব্দ তরঙ্গকে মধ্যকর্ণে পৌঁছে দেয়, যেখান থেকে তা মস্তিষ্কে প্রেরিত হয় এবং একটি ত্রিমাত্রিক চিত্র তৈরি করে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে ডলফিনরা বস্তুর আকার, আকৃতি, দূরত্ব, গতি এবং এমনকি অভ্যন্তরীণ গঠনও নির্ণয় করতে পারে। এমনকি তারা প্রায় ১০০ গজ দূর থেকেও বস্তুকে নির্ভুলভাবে শনাক্ত করতে পারে।

মানুষের শ্রবণশক্তির তুলনায় ডলফিনের শ্রবণ ক্ষমতা অনেক বেশি উন্নত। তাদের মস্তিষ্কের শ্রবণ প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল মানুষের চেয়ে অনেক বড় এবং শ্রবণ স্নায়ুও প্রায় দ্বিগুণ আকারের, যা তাদের দ্রুত শব্দ বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করে। ডলফিনরা কেবল শিকার ধরা বা পথ চেনার জন্যই নয়, নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্যও এই শ্রবণ ক্ষমতা ব্যবহার করে। প্রতিটি ডলফিনের নিজস্ব 'সিগনেচার হুইসেল' রয়েছে, যা তাদের একে অপরের থেকে আলাদা করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ডলফিনরা জলের নিচে এবং বাতাসেও শব্দ শুনতে সক্ষম। যদিও তাদের শ্রবণ অঙ্গ জলের জন্য বিশেষভাবে অভিযোজিত, তবুও তারা বাতাসের শব্দও শুনতে পায়। তাদের এই অসাধারণ শ্রবণ ক্ষমতা এবং ইকোলোকেশন প্রযুক্তি তাদের জলজ পরিবেশে টিকে থাকার জন্য এক অপরিহার্য হাতিয়ার।

উৎসসমূহ

  • detikedu

  • IDN Times

  • Medcom.id

  • Bobo

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।