অস্ট্রেলিয়ার বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণে ড্রোনের বৈপ্লবিক পরিবর্তন ও ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা

সম্পাদনা করেছেন: Olga Samsonova

অস্ট্রেলিয়ার বন্যপ্রাণী গবেষণায় ড্রোন প্রযুক্তির ব্যবহার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যা সিল ও তিমিদের মতো সংবেদনশীল প্রাণীকুলের অধ্যয়নের জন্য সম্পূর্ণ অহস্তক্ষেপমূলক পদ্ধতি সরবরাহ করছে। মন্যাশ ইউনিভার্সিটির একটি সাম্প্রতিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১০ সাল থেকে সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ইকোফিজিওলজি অধ্যয়নে ড্রোন ব্যবহারের ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটেছে, যা 'বায়োলজিক্যাল রিভিউস' জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা এখন থার্মাল সেন্সর ও উন্নত ক্যামেরা ব্যবহার করে দূর থেকে বৃহৎ সামুদ্রিক প্রাণীদের স্বাস্থ্য এবং আচরণ মূল্যায়ন করতে সক্ষম হচ্ছেন।

এই অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহারের ফলে গবেষকরা সনাতন পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে পারছেন, যেখানে প্রাণীদের কাছাকাছি যাওয়া প্রায়শই তাদের স্বাভাবিক আচরণে বিঘ্ন ঘটাত। উদাহরণস্বরূপ, ফিলিপ আইল্যান্ড নেচার পার্ক ২০১৬ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ান ফার সিল নিরীক্ষণের জন্য সফলভাবে ড্রোন ব্যবহার করে আসছে, যা তাদের জনসংখ্যার স্বাস্থ্যের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করেছে। এছাড়াও, ভিক্টোরিয়ার বনভূমিতে লেডবেটার'স পসামের মতো নিশাচর প্রজাতি ট্র্যাক করার ক্ষেত্রে থার্মাল ড্রোনগুলি বিশেষভাবে সহায়ক প্রমাণিত হয়েছে। মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, এই থার্মাল ড্রোনগুলি রাতের অন্ধকারে ঐতিহ্যবাহী 'স্পটলাইটিং' পদ্ধতির তুলনায় একই সময়ে দশ গুণ বেশি এলাকা জরিপ করতে পারে, যা পূর্বে অত্যন্ত শ্রমসাধ্য এবং ক্ষেত্রবিশেষে বিপজ্জনক ছিল।

অস্ট্রেলিয়ান ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেন্সি (AWC) ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার মাউন্ট গিবসন ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারিতে বিপন্ন পশ্চিমী কোয়েল (Western Quolls) পুনরায় প্রবর্তনের ক্ষেত্রেও ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। তারা ওয়াইল্ডলাইফ ড্রোনস-এর সাথে যৌথভাবে একটি উন্নত রেডিও-টেলিমেট্রি সিস্টেমযুক্ত ড্রোন মোতায়েন করেছে, যা একাধিক কোয়েলকে একই সাথে ট্র্যাক করতে সক্ষম। এই নতুন পদ্ধতিটি মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান প্রমাণিত হয়েছে, যারা আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটে সংকেত খুঁজতেন।

ভবিষ্যতের সংরক্ষণ কৌশলগুলি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এর সাথে ড্রোন প্রযুক্তিকে একীভূত করার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করবে। এই বিষয়ে উদ্ভাবনী পরিবেশগত পর্যবেক্ষণের উপর বিশেষজ্ঞগণ তাদের গবেষণা উপস্থাপন করবেন দ্য ইকোলজিক্যাল সোসাইটি অফ অস্ট্রেলিয়ার (ESA) সম্মেলনে, যা ২০২৫ সালের ২৩ থেকে ২৮ নভেম্বর অ্যাডিলেড কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলনে বাস্তুতান্ত্রিক ব্যবস্থার গভীরতর উপলব্ধি এবং কার্যকর সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করা হবে। অন্যদিকে, দ্য ইকোলজিক্যাল সোসাইটি অফ আমেরিকা (ESA) তাদের বার্ষিক সভা বাল্টিমোর, মেরিল্যান্ডে ১০ থেকে ১৫ আগস্ট ২০২৫-এ আয়োজন করবে, যেখানে এআই-চালিত বাস্তুবিদ্যা গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হবে। এই প্রযুক্তিগত সমন্বয়গুলি কেবল তথ্য সংগ্রহের গতিই বাড়ায় না, বরং পরিবেশগত নীতি এবং বাস্তব-জগতের ফলাফলের মধ্যেকার সংযোগকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে, যা একটি স্থিতিস্থাপক ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্য অপরিহার্য।

উৎসসমূহ

  • Australian Broadcasting Corporation

  • From sky to sea: Drones transform wildlife research with non-invasive techniques

  • Thermal drones are helping to monitor some of Australia’s most elusive wildlife

  • ESA 2025 Conference Program - Technological innovation and bridging the gap to real world application 3.1.6

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।