আর্কটিকের জলচর পাখিরা জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছে, তবে সময়সীমা সীমিত

সম্পাদনা করেছেন: Olga Samsonova

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আর্কটিক অঞ্চলে বসন্তের আগমন দ্রুততর হচ্ছে, যা সেখানকার পরিযায়ী পাখিদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে আর্কটিক অঞ্চলের হাঁস এবং রাজহাঁসের মতো জলচর পাখিরা তাদের পরিযায়ী কৌশল পরিবর্তন করছে। একটি নতুন গবেষণা, যা 'নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জ' জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে, তাতে দেখা গেছে যে এই পাখিরা তাদের যাত্রার সময়কাল কমিয়ে আনছে এবং উড়ানের গতি বাড়িয়ে দিচ্ছে যাতে তারা দ্রুত তাদের প্রজনন ক্ষেত্রে পৌঁছাতে পারে। এই পাখিরা তাদের যাত্রাপথে বিরতি ও খাদ্য গ্রহণের সময় কমিয়ে এনে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে, যা তাদের প্রজনন সাফল্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গবেষণায় ৫০০টিরও বেশি বসন্তকালীন পরিযানের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে, যেখানে পাঁচ ধরনের বড় আকারের আর্কটিক জলচর পাখির আচরণ পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এই পাখিরা তাদের যাত্রা সংক্ষিপ্ত করার জন্য বিরতি এবং খাদ্য গ্রহণের সময় কমিয়ে আনছে। এটি তাদের আর্কটিকের প্রজনন ঋতুর সঙ্গে নিজেদের সময়কে আরও ভালোভাবে মেলাতে সাহায্য করছে। তবে, বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে এই অভিযোজন ক্ষমতা ভিন্ন। গ্রেটার হোয়াইট-ফ্রন্টেড গুজ এবং Bewick's Swans-এর মতো কিছু প্রজাতি তাদের যাত্রাপথে বিরতি কমিয়ে দ্রুত অগ্রসর হতে পারছে, যেখানে পিঙ্ক-ফুটেড এবং ব্রেন্ট গুজ-এর মতো প্রজাতিগুলি তাদের যাত্রাপথের সীমাবদ্ধতার কারণে কম নমনীয়তা দেখাচ্ছে।

গবেষকরা সতর্ক করেছেন যে এই অভিযোজন ক্ষমতা আগামী ১৮ থেকে ২৮ বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকতে পারে। আর্কটিকের উষ্ণতা যে হারে বাড়ছে, তাতে পাখিদের এই পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির সঙ্গে কেবল পরিযানের সময় পরিবর্তন করে মানিয়ে নেওয়া কঠিন হতে পারে। দ্রুত উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে পাখিদের খাদ্য সংগ্রহের সময় এবং প্রজননের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ খুঁজে পাওয়া আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠবে। কিছু পাখি দ্রুত খাদ্য গ্রহণের জন্য উচ্চ মানের খাবার এবং শান্ত পরিবেশের উপর নির্ভর করে, যা সবসময় সহজলভ্য নাও হতে পারে। দ্রুত খাদ্য গ্রহণ এবং কম বিশ্রামের ফলে পাখিদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে পারে, যা তাদের প্রজনন সাফল্যকে প্রভাবিত করতে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তনের এই দ্রুত গতিতে, পাখিদের টিকে থাকার জন্য নতুন কৌশল অবলম্বন করতে হতে পারে, যেমন তাদের শীতকালীন আবাসস্থল পরিবর্তন করা বা পরিযানের পথ নতুন করে সাজানো। এই গবেষণাটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরি। এই পাখিদের এই অভিযোজন ক্ষমতা তাদের টিকে থাকার জন্য একটি ইতিবাচক দিক হলেও, এই নমনীয়তার একটি নির্দিষ্ট সীমা রয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে।

আর্কটিকের জলচর পাখিরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে কাজ করে। তাদের পরিযানের সময় এবং সাফল্য বাস্তুতন্ত্রের জটিল মিথস্ক্রিয়া এবং বিভিন্ন আবাসস্থলের প্রতিফলন ঘটায়। এই পরিস্থিতি কেবল পাখিদের জন্যই নয়, বরং সমগ্র বাস্তুতন্ত্রের জন্য একটি সতর্কবার্তা।

উৎসসমূহ

  • The Cool Down

  • Arctic-bound birds can still keep up with climate change for now

  • Climate change could overturn bird migration: Transarctic flights and high-latitude residency in a sea ice free Arctic

  • Temperature and stopover duration carry-over to affect Arctic arrival timing and breeding success in the cackling goose (Branta hutchinsii)

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।