২৫শে আগস্ট, ২০২৫ তারিখে, রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প কর্তৃক ফেডারেল রিজার্ভ গভর্নর লিসা কুককে বরখাস্ত করার চেষ্টার পর মার্কিন শেয়ার বাজারে উল্লেখযোগ্য অস্থিরতা দেখা যায়। এই ঘটনার দিনে ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ ৪৫,৬৩১.৭৪ পয়েন্টে বন্ধ হয়ে একটি নতুন উচ্চতা স্পর্শ করে, যেখানে এসএন্ডপি ৫০০ এবং নাসডাক কম্পোজিটও লাভ সহকারে দিন শেষ করে।
রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প গভর্নর কুকের বরখাস্তের ঘোষণা দেন, যার মূলে ছিল মর্টগেজ জালিয়াতির অভিযোগ। গভর্নর কুক এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন যে যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়া রাষ্ট্রপতি তাকে বরখাস্ত করার ক্ষমতা রাখেন না। এই ঘটনা ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতা এবং বৃহত্তর অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে, যার ফলে ট্রেজারি ইল্ড বৃদ্ধি, সোনার দাম বৃদ্ধি এবং মার্কিন ডলারের দুর্বলতা দেখা দিয়েছে।
ঐতিহাসিকভাবে, ফেডারেল রিজার্ভ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে আসছে, যেখানে মুদ্রানীতি নির্ধারণে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকার চেষ্টা করা হয়। গভর্নরদের ১৪ বছরের মেয়াদ থাকে এবং সাধারণত গুরুতর অসদাচরণ বা দায়িত্বে অবহেলা ছাড়া তাদের বরখাস্ত করা যায় না। ১৯৯৫ সালের হামফ্রে'স এক্সিকিউটর বনাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মামলার রায় অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি স্বাধীন সংস্থার কর্মকর্তাদের ইচ্ছামত বরখাস্ত করতে পারেন না। তবে, ট্রাম্প প্রশাসন এই যুক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং কিছু ক্ষেত্রে স্বাধীন নিয়ন্ত্রকদের বরখাস্ত করার জন্য কারণ ছাড়াই ক্ষমতা প্রয়োগের চেষ্টা করেছে।
সুপ্রিম কোর্ট যদিও ফেডারেল রিজার্ভকে অন্যান্য সংস্থা থেকে আলাদা হিসেবে উল্লেখ করেছে, তবুও এই ঘটনাটি একটি আইনি লড়াইয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়াতে পারে। এই পরিস্থিতি মার্কিন মুদ্রানীতির উপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বাজার এই অভূতপূর্ব ঘটনার উপর নিবিড়ভাবে নজর রাখছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রানীতির ভবিষ্যৎ গতিপথকে প্রভাবিত করতে পারে।
বিভিন্ন বিশ্লেষকদের মতে, ফেডারেল রিজার্ভের কার্যক্রমে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টা মুদ্রানীতির বিশ্বাসযোগ্যতা এবং কার্যকারিতা হ্রাস করতে পারে। এর ফলে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দুর্বল হতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী বন্ডের ইল্ড বৃদ্ধি পেতে পারে, যা মার্কিন সরকারের জন্য ঋণ গ্রহণকে আরও ব্যয়বহুল করে তুলবে। এই অনিশ্চয়তা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, যা ডলারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সোনার চাহিদা বাড়াতে পারে।
আল জাজিরার একটি প্রতিবেদন অনুসারে, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মুদ্রানীতি সিদ্ধান্তকে কম কার্যকর এবং বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে, যা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আরও কঠিন করে তোলে। গভর্নর কুক এই পদক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন এবং আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক বাজারের উপর একটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে।