আগস্ট ২০২৫-এ, ভারতীয় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড (SEBI) তার বার্ষিক সম্মেলনে মূলধন বাজারের গভীরতা বৃদ্ধির উপর জোর দিয়েছে, যেখানে উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তিকে প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। SEBI চেয়ারম্যান মাধবী পুরী বুচ বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ এবং তারল্য বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রাক-আইপিও (IPO) কোম্পানিগুলির ট্রেডিংয়ের জন্য একটি পাইলট প্রকল্প চালু করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এই উদ্যোগগুলি ভারতের মূলধন বাজারকে আরও শক্তিশালী ও বিস্তৃত করার পথে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
বর্তমানে ভারত বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মূলধন বাজার, যেখানে ১৩০ মিলিয়ন বিনিয়োগকারী সক্রিয় রয়েছেন। আর্থিক বছর ২০২৫-এ প্রাথমিক বাজারে ₹৪.৩ ট্রিলিয়ন সংগ্রহ করা হয়েছে। গত তিন বছরে নগদ বাজারের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে, যা দেশের আর্থিক খাতের ক্রমবর্ধমান শক্তিকে নির্দেশ করে। মিউচুয়াল ফান্ডের সম্পদ এক দশকে ছয়গুণ বেড়ে ₹৭৫ ট্রিলিয়নেরও বেশি হয়েছে, যা দেশের ক্রমবর্ধমান পারিবারিক সঞ্চয়ের একটি সুস্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে। এই বৃদ্ধি কেবল পরিসংখ্যানগত নয়, এটি ভারতের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির একটি বড় প্রতিফলন।
প্রযুক্তির ব্যবহার মূলধন বাজারের কার্যকারিতা এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (NSE) প্রতিদিন ২০০০ কোটিরও বেশি লেনদেন প্রক্রিয়া করে, যা ন্যানোসেকেন্ডের মধ্যে সম্পন্ন হয়। এর বাজার মূলধন ₹৪৫০ লক্ষ কোটি ($৫.২ ট্রিলিয়ন) এ পৌঁছেছে, যা গত ৩০ বছরে ১২৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। খুচরা বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ সাতগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বাজারের গণতান্ত্রিকীকরণের একটি বড় প্রমাণ। ২০ কোটিরও বেশি ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, যার মধ্যে ৮০% ছোট শহরগুলি থেকে এসেছে, যা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আর্থিক বাজারের প্রবেশাধিকার প্রসারিত করেছে।
বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার জন্য SEBI প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। ১ অক্টোবর, ২০২৫ থেকে একটি ইউপিআই (UPI) বৈধকরণ ব্যবস্থা চালু করা হবে, যা সাইবার জালিয়াতি মোকাবেলায় সহায়ক হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং জবাবদিহিতার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে, যা আর্থিক লেনদেনকে আরও নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য করে তুলবে। PwC ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতে আর্থিক পরিষেবাগুলিতে AI-এর ব্যবহার গ্রাহক অভিজ্ঞতা উন্নত করতে, উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এবং রাজস্ব বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। AI ব্যাংকিং কার্যক্রমকে ৪৬% পর্যন্ত উন্নত করতে পারে বলে অনুমান করা হয়েছে, যা আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য একটি নতুন পথ খুলে দেবে।
SEBI নিয়ন্ত্রক কাঠামো সহজ করার জন্য ক্রমাগত কাজ করছে। মার্চ থেকে জুন ২০২৫-এর মধ্যে, SEBI তালিকাভুক্ত সংস্থা, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (AIFs) এবং ফরেন পোর্টফোলিও ইনভেস্টরদের (FPIs) জন্য ব্যবসায়িক সুবিধা বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এই পদক্ষেপগুলি মূলধন গঠনকে উৎসাহিত করবে এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করবে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও, ভারতের মূলধন বাজার ২০৪৭ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার পথে একটি প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। পরিকাঠামো এবং ডিজিটাল রূপান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়নে এই বাজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই গভীরতা এবং উদ্ভাবন ভারতের আর্থিক ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করছে।