ভারতের আইটি সেক্টর মার্কিন শুল্কের মধ্যে এআই (AI) প্রসারের সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে

সম্পাদনা করেছেন: Olga Sukhina

ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি (IT) ক্ষেত্র বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (TCS) অমিত কাপুরের নেতৃত্বে একটি বিশেষ এআই (AI) ইউনিট গঠন করেছে। এই কৌশলগত পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য হলো এআই-চালিত সমাধানগুলির ব্যবহার ত্বরান্বিত করা এবং ভারতীয় আইটি সংস্থাগুলির মধ্যে এই ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা। এই উন্নয়নটি টিসিএস (TCS)-এর কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘটনার পর এসেছে, যা এআই (AI) গ্রহণ এবং আউটসোর্সিং-এর ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে শিল্প জুড়ে একটি সাধারণ প্রবণতা প্রতিফলিত করে। এই কৌশল বিশ্বব্যাপী প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাকসেন্টারের (Accenture) মতো সংস্থাগুলির পদক্ষেপের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা ভবিষ্যতের বৃদ্ধির জন্য এআই-এর ক্রমবর্ধমান গুরুত্বকে তুলে ধরে।

ভারতের আইটি সেক্টর বিশ্বব্যাপী এআই (AI) গ্রহণ এবং প্রতিভার ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। দেশটি এআই (AI) এবং মেশিন লার্নিং (ML) ও বিগ ডেটা অ্যানালিটিক্স (Big Data Analytics) প্রতিভার ক্ষেত্রে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। ভারতীয় আইটি সংস্থাগুলি এখন কেবল রুটিন প্রোগ্রামিং থেকে সরে এসে কৌশলগত উদ্ভাবনের অংশীদার হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছে। তারা এআই (AI) পরামর্শ, ডেটা ইঞ্জিনিয়ারিং এবং এআই (AI) মডেল প্রশিক্ষণের মতো নতুন পরিষেবা প্রদান করছে। বিশেষ করে, ভারতের মধ্যম সারির ব্যবসাগুলি (mid-market businesses) বিশ্বব্যাপী এআই (AI) গ্রহণকে নেতৃত্ব দিচ্ছে, যেখানে ৯৬% সংস্থা জেনারেটিভ এআই (Gen AI) বাস্তবায়নের উপর জোর দিচ্ছে। আর্থিক পরিষেবা (BFSI) এবং প্রযুক্তি খাতগুলি এআই (AI) গ্রহণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। এই প্রবণতাগুলি ভারতের এআই (AI) বাজারকে ২০২৪ সালে ৬ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে ২০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর পূর্বাভাস দিচ্ছে।

একই সময়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের রপ্তানি পণ্যের উপর ৫০% শুল্ক আরোপ করেছে, যা আগস্ট ২৭, ২০২৫ থেকে কার্যকর হয়েছে। রাশিয়ার তেল আমদানি অব্যাহত রাখার কারণে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আরোপিত অন্যতম কঠোর শুল্ক বৃদ্ধি, যা বাণিজ্য আলোচনাকে বাধাগ্রস্ত করেছে এবং ভারতের রপ্তানি খাতকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যার ফলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মসংস্থান হ্রাস পেতে পারে। এই শুল্কের আওতায় আসা প্রধান খাতগুলির মধ্যে রয়েছে বস্ত্র, পোশাক, রত্ন ও গহনা, চামড়া, সামুদ্রিক পণ্য, প্রকৌশল, স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রাংশ, রাসায়নিক, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং সামুদ্রিক খাদ্য। এই শুল্কের কারণে ভারতের রপ্তানি প্রায় ৪০-৪৫% পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে এবং জিডিপি (GDP) বৃদ্ধিতে প্রায় ০.৪-০.৫% প্রভাব ফেলতে পারে।

এই প্রতিকূলতার মুখে, ফিচ (Fitch) ভারতের ক্রেডিট রেটিং 'BBB-' এবং স্থিতিশীল আউটলুক (stable outlook) বজায় রেখেছে। সংস্থাটি ভারতের শক্তিশালী বৃদ্ধি এবং বাহ্যিক অর্থব্যবস্থার উপর আস্থা প্রকাশ করেছে, যদিও শুল্কের ঝুঁকিকে একটি মাঝারি বিবেচনা করেছে। বাজার প্রতিক্রিয়া হিসেবে, মার্কিন শুল্কের অনিশ্চয়তার কারণে ভারতীয় বাজারগুলিতে (নিফটি ৫০ এবং সেনসেক্স) পতন দেখা গেছে এবং মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটেছে, যা বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতিতে, ভারত চীন এবং রাশিয়ার সাথে তার সম্পর্ক জোরদার করছে এবং "ভোকাল ফর লোকাল" (Vocal for Local) এর মতো দেশীয় উদ্যোগগুলিকে উৎসাহিত করছে। এর পাশাপাশি, রিয়েল-মানি অনলাইন গেমিং-এর উপর নিষেধাজ্ঞার মতো অভ্যন্তরীণ নীতিগুলিও দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে, যা একটি বড় শিল্প এবং কর্মসংস্থানকে প্রভাবিত করছে। সুতরাং, ভারতের আইটি সেক্টর একদিকে যেমন এআই (AI) প্রযুক্তির মাধ্যমে ভবিষ্যতের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছে, তেমনই অন্যদিকে মার্কিন শুল্কের মতো বাহ্যিক অর্থনৈতিক চাপ মোকাবেলা করছে। এই দ্বিমুখী চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, দেশটির তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প তার অন্তর্নিহিত অভিযোজন ক্ষমতা এবং কৌশলগত বিচক্ষণতার মাধ্যমে এই জটিল বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে নিজেদের পথ খুঁজে নিচ্ছে।

উৎসসমূহ

  • Republic World

  • Reuters

  • Financial Times

  • Reuters

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।