ব্লকচেইন বিশ্লেষণকারী সংস্থা এলিপটিকের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, রাশিয়ান রাষ্ট্র-সংযুক্ত সংস্থাগুলি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিচালনা করতে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করে ৮ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ডিজিটাল সম্পদ সরিয়েছে। এই লেনদেনের একটি বড় অংশ টিথার ইউএসডিটি (USDT) এর মতো স্টেবলকয়েন ব্যবহার করে সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিবেদনটি গত ১৮ মাসের লেনদেন বিশ্লেষণ করেছে।
এই অবৈধ কার্যক্রমের কেন্দ্রে রয়েছেন মোল্দোভান পলাতক ইলান শোর, যিনি রাশিয়ান রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের একজন মিত্র হিসেবে পরিচিত। শোরের নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থাগুলির মাধ্যমে এই ডিজিটাল সম্পদগুলি সরানো হয়েছে। শোর, যিনি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার অধীনে রয়েছেন, তিনি এই সম্পদগুলি ব্যবহার করে রাশিয়ান সংস্থাগুলিকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন যারা বিশ্ব ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন। শোরের সংস্থা, এ৭ (A7), ২০২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল রাশিয়ান সংস্থাগুলিকে নিষেধাজ্ঞা এড়াতে এবং আন্তর্জাতিক লেনদেন সহজতর করার জন্য। এই সংস্থার ৪৯% মালিকানা রাশিয়ান রাষ্ট্রীয় ব্যাংক প্রমসভিয়াজব্যাংক (PSB) এর, যা প্রতিরক্ষা খাতের সাথে জড়িত এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে।
এলিপটিকের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, শোরের সংস্থাগুলির ওয়ালেটগুলিতে গত ১৮ মাসে ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি স্টেবলকয়েন জমা হয়েছে। শোর সেপ্টেম্বর ২০২৫-এর শুরুতে পুতিনকে জানিয়েছিলেন যে তার সংস্থা এ৭ গত দশ মাসে প্রায় ৮৯ বিলিয়ন ডলারের আন্তর্জাতিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে, যার অর্ধেকের বেশি এশিয়ান অংশীদারদের সাথে জড়িত ছিল।
তবে, টিথারের মতো কেন্দ্রীভূত স্টেবলকয়েনের উপর নির্ভরতা একটি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলি এই ওয়ালেটগুলি ফ্রিজ করতে পারে। এর প্রতিক্রিয়ায়, শোরের নেটওয়ার্ক আগস্ট ২০২৫-এ তাদের ওয়ালেট পরিকাঠামো পরিবর্তন করেছে এবং টিথারের বিকল্প হিসেবে নিজস্ব রুবেল-পেগড স্টেবলকয়েন, এ৭এ৫ (A7A5) প্রচার করতে শুরু করেছে। যদিও এ৭এ৫-এর সরবরাহ সীমিত (প্রায় ৪৯৬ মিলিয়ন ডলার) এবং এটি এখনও পর্যন্ত উল্লেখযোগ্যভাবে সফল হয়নি, এটি রাশিয়ার জন্য একটি বিকল্প পথ তৈরি করেছে।
এই ঘটনাটি ডিজিটাল সম্পদের মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জগুলি তুলে ধরেছে। এলিপটিকের মতো ব্লকচেইন বিশ্লেষণকারী সংস্থাগুলি এই ধরনের অবৈধ আর্থিক প্রবাহ সনাক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই লেনদেনগুলি কেবল আর্থিক নিষেধাজ্ঞাই নয়, মোল্দোভার মতো দেশগুলিতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনাও বাড়িয়ে তুলেছে, যেখানে শোরের সংস্থাগুলি রাজনৈতিক কর্মীদের অর্থায়নের জন্য ক্রিপ্টো ব্যবহার করেছে। এই ঘটনাগুলি আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারের উপর নজরদারি এবং নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।